আলী ইব্রাহিম
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:৫৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বহুজাতিক কোম্পানির সার্ভারে প্রবেশাধিকার নেই এনবিআরের

বহুজাতিক কোম্পানির সার্ভারে প্রবেশাধিকার নেই এনবিআরের

ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা বাড়াতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের আইডি ও পাসওয়ার্ড সরবরাহের বেঁধে দেওয়া সময় এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ সময়ে এনবিআরের ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে থাকা কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে এনবিআরের এক্সেস বা প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য লাগলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে নোটিশ করতে হয় তথ্য পাঠাতে। অর্থাৎ এখনো হাজার হাজার কোম্পানির কাছ থেকে ম্যানুয়ালি তথ্য নিতে হয়, যাচাই-বাছাই করতে হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সার্ভারে এনবিআরের সার্বক্ষণিক প্রবেশাধিকার এখনো তৈরি হয়নি। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, বড় অঙ্কের ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের সার্বক্ষণিক প্রবেশাধিকার পেতে মরিয়া ছিল এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানির আইডি-পাসওয়ার্ড ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেয় এনবিআর। যেসব কোম্পানির বার্ষিক লেনদেন ৫ কোটি টাকার বেশি, সেসব কোম্পানি এনবিআরের অনুমোদিত সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আদতে বেশিরভাগ কোম্পানি এ নিয়ম পালন না করায় সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের সময়সীমা জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে এনবিআর। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশের ১২টি কমিশনারেটের ১৬৯টি প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের ৩৪টি, পশ্চিমের ৫২টি, পূর্বের ১৭টি, উত্তরের ১৩টি, বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) ভ্যাটের ছয়টি, চট্টগ্রামের ১৩টি, রাজশাহীর ১৫টি, যশোরের পাঁচটি, রংপুরের তিনটি, কুমিল্লার একটি ও সিলেটের ১০টি প্রতিষ্ঠান আছে। তবে কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট, খুলনার একটি প্রতিষ্ঠানও এর মধ্যে নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের ভ্যাট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ড. মঈনুল খান কালবেলাকে বলেন, এনবিআরকে সরবরাহ করা আইডি ও পাসওয়ার্ডের বিষয়ে সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে সময় বাড়ানোর কারণ হিসেবে এনবিআর এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করলে তাদের ভ্যাট নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সময় বাড়িয়েছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোর সফটওয়্যারে এনবিআরের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে জারি করা এনবিআরের এক আদেশে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকার বেশি, তাদের এনবিআর নির্ধারিত স্পেসিফিকেশনের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এনবিআর নির্ধারিত ভেন্ডরের কাছ থেকে কিংবা, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি অন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করে হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে চায়, তাহলে এনবিআর নির্ধারিত বাধ্যবাধকতা মিটিয়ে অন্য সফটওয়্যারের অনুমোদন নিতে পারবে তারা।

ভ্যাট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বড় দেশীয় কোম্পানি কিংবা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নিজস্ব এক বা একাধিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে। সেগুলো বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত। এনবিআরের যে ডাটাগুলো যেমন, রিটার্ন সাবমিশন, অডিটসহ তথ্যগুলো রাখতে হবে। সেজন্য লোকাল সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো ঠিক করেছে। সেই লোকাল সফটওয়্যারের সঙ্গে ডাটাগুলো ইন্ট্রিগ্রেশন হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ইন্ট্রিগ্রেশন হয় না। তাদের যে সফটওয়্যার, সেটার সঙ্গে লোকাল কোম্পানির সফটওয়্যার ইন্ট্রিগ্রেশন হয় না। এখন কোম্পানিগুলো নিজস্ব সফটওয়্যার থেকে ডাটাগুলো এ লোকাল কোম্পানির সফটওয়্যারে পৃথকভাবে এন্ট্রি করতে হয়। করার পর যখন রিটার্ন সাবমিশন হয়, তখন এখান থেকে আবার রিটার্নের যে আইবাসের ভ্যাট অনলাইনের সফটওয়্যার আছে, সেখানে আবার পৃথকভাবে এন্ট্রি দিতে হয়। মোট তিনবার এন্ট্রি দিতে হয়। নিজের সিস্টেমে একবার, লোকাল সফটওয়্যারে একবার আবার ভ্যাট অনলাইনের সফটওয়্যারে আরেকবার। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এনবিআরের অটোমেশন প্রক্রিয়া। যদিও স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মেলাতে এনবিআরের অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। অনেক স্টেকহোল্ডারকে এখানে ইন্ট্রিগ্রেট করতে হবে। আর অটোমেশন বাস্তবায়নে লোকাল সফটওয়্যার কোনো কাজে আসবে না বলেও মনে করেন ভ্যাট কর্মকর্তারা।

এনবিআর সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরের শুরুতে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাটনীতি) জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে ঢাকার ভ্যাট কমিশনারেটের তিনজন কমিশনার দেখা করেন। তখন এ সফটওয়্যারের অগ্রগতি জানাতে গিয়ে কমিশনাররা জানান, এনবিআরের অনুমোদিত সফটওয়্যারগুলো অনেক ধীরগতির, আস্তে আস্তে কাজ করে। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে হয়তো আরও অনেক সময় লাগবে বলে জানান। তখন এনবিআরের এ সদস্য কমিশনারদের এ বিষয়টি লিখিত আকারে দিতে বলেন। এ ছাড়া এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কতদিন সময় লাগতে পারে? তখন কমিশনারদের পক্ষ থেকে একেকজন একেক রকম সময়ের তথ্য দিলেও বিষয়টি আমলে নিয়ে এনবিআর ৬ মাস সময় বাড়িয়েছে, যা শেষ হবে চলতি বছরের ২৩ জুন।

ভ্যাটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, ভ্যাট সফটওয়্যার বাস্তবায়ন ইস্যুতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই পিছিয়ে আছে। যার কারণে সময় বাড়িয়ে কিছুটা ছাড় দিয়েছে এনবিআর। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় আসা ছাড়া এনবিআরের অন্য কোনো বিকল্প নেই। তাই অটোমেশনের দিকে এগোলে বিষয়গুলো সুরাহা করতে হবে। তবে বর্তমানে সফওয়্যার সরবরাহকারী এনবিআরের অনুমোদিত ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও নানা ধরনের কারিগরি ত্রুটি রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে নিয়োগ, এসএসসি পাশেও আবেদন

ঈদের আগে জুতার কারখানায় রহস্যের আগুন

সরকারকে হেফাজতের হুঁশিয়ারি

জাবিতে ছাত্রলীগ কর্মীসহ বহিষ্কার ৭

হরিপুরে সৎসঙ্গ আশ্রম মন্দির উদ্বোধন

রেলপথ ও সড়ক পথ অবোরধের হুঁশিয়ারি ছাত্রলীগের

দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

দেশের অসংখ্য মানুষ খাবারের কষ্ট পাচ্ছে : চরমোনাই পীর

১০

শৈলকুপায় ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

১১

আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি (৩০ মার্চ ২০২৪, শনিবার)

১২

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

১৩

সিন্ডিকেট চক্র সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে : ডা. ইরান 

১৪

অহেতুক কথা বলে হাস্যাস্পদ হবেন না : সরকারকে আলাল

১৫

জমির দাবিতে বাবার কবরে শুয়ে দাফনে বাধা

১৬

লাইলাতুল কদর চেনার আলামত

১৭

বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি 

১৮

গণতন্ত্রকে আইসিইউতে পাঠিয়েছে আ.লীগ : প্রিন্স 

১৯

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ৬ দফা দাবি

২০
*/ ?>
X