করোনায় শিশুদের লেখাপড়ায় ‘ভয়াবহ ডিজিটাল বৈষম্য’

করোনায় শিশুদের লেখাপড়ায় ‘ভয়াবহ ডিজিটাল বৈষম্য’

কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধ থাকার সময় প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজনেরও কম (১৮:৭ শতাংশ) দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। মহামারির কারণে বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ ছিল, সেই সব দেশের একটি বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল সার্ভে অন চিলড্রেন’স এডুকেশন ইন বাংলাদেশ-২০২১’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে শিশুদের লেখাপড়ার ওপর স্কুল বন্ধ থাকার প্রভাব উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফ যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে।

জরিপে দেখা যায়, কোভিড-১৯ এর সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রারম্ভিক পর্যায়ের শিশুরা, যাদের ইন্টারনেট ও টেলিভিশন ব্যবহারের সুযোগ সীমিত এবং যাদের বাড়িতে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মতো সহায়ক ডিভাইসের অভাব রয়েছে। তা ছাড়া, শহর এলাকার শিশুদের (২৮ দশমিক ৭ শতাংশ) তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় কমসংখ্যক শিশু (১৫ দশমিক ৯ শতাংশ) দূরশিক্ষণ ক্লাসে অংশ নেয়।

বড় ধরনের ভৌগোলিক বৈষম্যের বিষয়টিও জরিপে উঠে এসেছে যেখানে দেখা গেছে, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল খুলনা ও ঢাকায় (যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ১ শতাংশ) এবং সবচেয়ে কম ছিল ময়মনসিংহে (৫ দশমিক ৭ শতাংশ)।

সবচেয়ে কম বয়সী শিশুরা বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। দূরশিক্ষণ ক্লাসে অংশগ্রহণের হার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের (নিম্ন মাধ্যমিকে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ ও উচ্চ মাধ্যমিকে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ) তুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ক্ষেত্রে (১৩ দশমিক ১ শতাংশ) ছিল কম।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘শিশুদের ওপর মহামারির প্রভাব দেশজুড়ে এখনো একই রকম। শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও বেশি মাত্রায় অভিঘাত সহনশীল করতে ডিজিটাল-বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।’

জরিপটি কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন দীর্ঘস্থায়ী স্কুল বন্ধের কারণে শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি, স্কুলের বাইরে থাকা, ঝরে পড়া ও শেখার ক্ষতিসহ শিক্ষার অনান্য ফলের ওপর প্রভাব বুঝতে সাহায্য করবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান।

জরিপে বাল্যবিয়ে সম্পর্কিত মহামারি পরবর্তী প্রাথমিক উপাত্তও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জরিপটি এক্ষেত্রে নিম্নমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে, যা সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী হওয়ার কারণ।

শিশুদের পরিস্থিতির ওপর দেশের বৃহত্তম এবং নির্ভরযোগ্য জরিপ ২০১৯ সালের বাংলাদেশ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) অনুসারে, ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে তাদের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে। ২০২৪ সালে হতে যাওয়া পরবর্তী এমআইসিএস নিশ্চিত করবে যে, ‘ন্যাশনাল সার্ভে অন চিলড্রেন’স এডুকেশন ইন বাংলাদেশ-২০২১’ জরিপে নির্দেশিত বাল্যবিয়ের ইতিবাচক নিম্নগামী প্রবণতা টিকে আছে কিনা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com