পুলিশকে খুন করেননি, ছিলেন গুমের সঙ্গে, স্বীকার আরাভ খানের

ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।
ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।ছবি : সংগৃহীত

পুলিশ সদস্যকে খুনের মামলায় গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। সেই সঙ্গে তার নামে একাধিক অস্ত্র মামলা থাকার কথাও জানান।

আজ বৃহস্পতিবার দুবাই থেকে ‘আরাভ খান’ নামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন তিনি।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলারি’ উদ্বোধন করতে গেলে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ওই জুয়েলারির মালিক আরাভ খান এসবি পুলিশ মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি।

এ বিষয়ে আরাভ তার ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘শত ঝড় তুফানের মধ্যে আমার অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফলভাবে শেষ হয়েছে। এতকিছু শোনার পারও সাকিব আল হাসান ভাই পিছু হাঁটেননি, তাকে ধন্যবাদ।’

খুনের মামলার আসামি থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম আমাকে খুনি ও দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা এনে বিদেশে ব্যবসা শুরু করেছি—এসব সংবাদ প্রকাশ করছে। আরে ভাই, আমি যদি খুনি হতাম তাহলে তো আন্ডারগ্রাউন্ডে (আড়ালে) চলে যেতাম। পাঁচ বছর আগের একটা ঘটনা, এরপর তো আমি এক দিনের জন্যও অফলাইন হইনি। আমি বলিনি আমার নামে মামলা নেই, মামলা আছে।’

সেদিনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করতাম। বনানীতে আপন বিল্ডার্স নামে আমার অফিস ছিল। সে অফিসে একটা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কাথাকাটাকাটি নিয়ে এসবির ইন্সপেক্টর মার্ডার হয়। এটা সম্পূর্ণ এক্সিডেন্ট ছিল। আমি তখন বাসায় ছিলাম। আমার সহকারী আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানায়। আমার একটাই অপরাধ, আমি ওই অফিসের মালিক ছিলাম।

‘এ ঘটনায় আমি জড়িত না, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। মামলায় বলা আছে, আমি গুমের সাথে জড়িত। হ্যাঁ, সেটা যদি আমার অপরাধ হয়, আমি কথা বলেছি। আমি গুমের সঙ্গে জড়িত। সে শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব।’

ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।
সাকিব ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি পুলিশ

অস্ত্র মামলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম যা সত্য তা লিখেছে, মিথ্যাও লিখেছে। তারা লিখেছে অস্ত্র মামলায় বিভিন্ন সময় পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করেছে, জেলে দিয়েছে। মিথ্যা বলব না। হ্যাঁ, অস্ত্র মামলা আমার নামে ছিল, আছে। আমি আগেও বলেছি আমার অনেক শত্রু আছে। অমি অনেক ভালো মানুষ তাও বলব না। আসলে অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে হেল্প করে ফ্লাইটে উঠিয়ে দিয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। যে ভাইদের নাম বলছে তারা আমার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত না। একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে সবার সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একজন ব্যবসায়ী সাবানের মতো, দোকান থেকে কেনার পর এ সাবান পুলিশ, আর্মি, সন্ত্রাস যে কেউ ব্যবহার করতে পারে।’

ঘটনার প্রেক্ষাপট

২০১৮ সালের জুলাই মাসে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান। এ ঘটনায় ওই বছরের ১০ জুলাই মামুনের ভাই ঢাকার বনানী থানায় মামলা করেন। মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

মামলা ও নথিপত্রের সূত্রে জানা গেছে, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন মামুন ইমরান খান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়।

লাইভে আরাভ বলেন, ‘আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। আমার বাবা দিনমজুর ছিলেন। আমি ঢাকায় এসে চেষ্টা করছি কিছু করার। প্রথমে হোটেলে কাজ করছি। খুব কষ্ট করছি। তিল তিল করে এ জায়গায় এসেছি। খুব শিগগিরই আমেরিকায় আরাভ জুয়েলার্সের একটা ব্রাঞ্চ উদ্বোধন করব।

‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের পর আমার কিছু বড় ভাই ও ছোট ভাই আমাকে বলেছে, তুমি অন্য দেশে চলে যাও। তোমাকে ইন্টারপোল পুলিশের মাধ্যমে ধরা হবে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলতে চাই, আমি পুলিশের ভয়ে দেশে আসি না এমন না, আমি দেশে আসি। আপনারা যদি বলেন, এটার সুষ্ঠু  বিচার হবে, তুমি দেশে আসো। আমি অবশ্যই আসব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আসলে পুলিশকে ভয় পাই না। আমার কিছু ব্যবসায়িক শত্রু আছে, তাদের ভয় পাই। তারপরও আমি লুকাব না, আমি মোবাবিলা করব। আদালত বিচার করবে আমি অপরাধী কিনা! সে বিচারে আমি যদি দোষী হই সব শাস্তি মাথা পেতে নেবে।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com