পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লার জাহাজের ভাড়া দিতে পারছে না বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। ভাড়ার অর্থ পরিশোধ করতে একাধিকবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। জাহাজগুলো বসে থাকায় ভাড়ার টাকার সঙ্গে জরিমানার অর্থও যোগ হচ্ছে। এদিকে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, ডলার না থাকার কারণে জাহাজের ভাড়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ডলার চেয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, আমাদের এ কেন্দ্রটি চালু রাখতে কয়লার সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। এ জন্য কয়লাবাহী জাহাজের ভাড়া যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে হবে। কয়লা খালাস দেরি হওয়ার কারণে জাহাজ ভাড়ার সঙ্গে জরিমানাও গুনতে হবে। তিনি জানান, এ বিষয়ে আমরা সোনালী ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। ডলার সংকটের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সোনালী ব্যাংক ডলার সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিসিপিসিএলের মালিকানাধীন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা নিয়ে এমভি প্রভু মিহিকা, এমভি রু চেন শাং ও এমভি আমেরিকা গ্রিকা যথাক্রমে ৫৫ হাজার, ৫৫ হাজার ও ৬০ হাজার ৫০০ টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। আর এমভি অ্যান্ড্রোমিডা ৬০ হাজার ৫০০ টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। এ চারটি জাহাজ কয়লা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে যথাক্রমে ১৪, ১৭, ১৮ ও ২১ ডিসেম্বর। এর মধ্যে এমভি প্রভু মিহিকার ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৭০ ডলার, এমভি রু চেন শাংয়ের ৮ লাখ ৮৪ হাজার ১৫ ডলার, এমভি আমেরিকা গ্রিকার ১০ লাখ ৪৮ হাজার ১৬২ ডলার ও এমভি অ্যান্ড্রোমিডার ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৫ ডলার দরকার।
তবে ভাড়া পরিশোধ না করতে পারায় চারটি জাহাজের জন্য দৈনিক যথাক্রমে ১৪ হাজার ৯৯৯ ডলার, ১৪ হাজার ৯৭৮ ডলার, ১৪ হাজার ৭৬০ ডলার ও ১৪ হাজার ৯৫২ ডলার ডেমারেজ দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী, কয়লা খালাসের আগে ৯০ শতাংশ জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন ৩৯ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি।
জানা গেছে, জাহাজ চারটির ভাড়া অগ্রিম পরিশোধে সোনালী ব্যাংকের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল করপোরেট শাখায় ফ্রেইট ইনভয়েস দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ভাড়া পরিশোধ না করায় চুক্তি অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশাপাশি বিল পরিশোধ করে দ্রুত মাল খালাস না করতে পারলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কয়লা ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। পাশাপাশি কয়লার নিজস্ব রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তা দীর্ঘ সময় জাহাজে অলস অবস্থায় থাকলে স্বতঃপ্রণোদিত প্রজ্বালনের মাধ্যমে যে কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা আমদানিতে যথেষ্ট চলতি মূলধন ছিল না। এজন্য তাদের চীনের অংশীদার হিসেবে সিএমসি ছয় মাস বিলম্বে বিল পরিশোধের শর্তে কয়লা সরবরাহে আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল বিসিপিসিএল ও সিএমসির মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়।
চুক্তির আওতায় সিএমসি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪১ টন কয়লা সরবরাহ করে, যার মূল্য ৪৭৭ দশমিক ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১১৬ দশমিক ১৪১ মিলিয়ন ডলার। নতুন কয়লা আসায় ডিসেম্বর নাগাদ তা বেড়ে ১৫১ দশমিক ৫২৮ মিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া জানুয়ারিতে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসির ৩৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। আগের বকেয়া ১১৬ দশমিক ১৪১ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। না হলে সিএমসি নতুন করে কয়লা সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এতে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।