শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আবেদ খান
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৬:২২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

তিন নভেম্বরের খুনিদের ক্ষমা নেই

তিন নভেম্বরের খুনিদের ক্ষমা নেই

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মোশতাক-জিয়া চক্র খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না। তারা সবসময় একটা পাল্টা অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় ছিল। কেননা ঢাকা তখন এক অস্থির নগরী। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতার অন্ত ছিল না, প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছিল দৃশ্যপট, একের পর এক চলছিল অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি। আর এ পাল্টা আঘাত এলে তা কীভাবে প্রতিহত করা হবে, এ নিয়ে খুনিচক্র ছিল ভীষণ উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে পাল্টা অভ্যুত্থানের পাশাপাশি খন্দকার মোশতাকের প্রধান অস্বস্তি ছিল আওয়ামী লীগের মধ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কা। যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা তখন দিশেহারা। চার জাতীয় নেতাসহ প্রায় ৭৫ জন এমপি-মন্ত্রী কারাগারে। এর বাইরে অনেকে আত্মগোপনে, কেউ কেউ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। কয়েকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মোশতাক মন্ত্রিপরিষদে যোগ দিতে বাধ্য করেছেন বটে, কিন্তু এ সত্ত্বেও খন্দকার মোশতাকের মধ্যে আওয়ামী লীগ-ভীতি ক্রমান্বয়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে আরও দুর্বল করতে মোশতাক জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

এর পাশাপাশি ফারুক ও রশিদ সিদ্ধান্ত নেয়, পাল্টা অভ্যুত্থানে যদি মোশতাককে হত্যা করা হয়, তাহলে দুটি বিষয় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। প্রথমে প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করতে হবে, যাতে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো শূন্যতার সৃষ্টি না হয়। একইসঙ্গে মোশতাকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই সময় কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি ঘাতক দল পাঠিয়ে জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করতে হবে। এ জন্য তারা পাঁচজনের একটি ঘাতক দল গঠন করে। ঠান্ডা মাথায় খুনের ব্যাপারে এ ঘাতক দলের সদস্যরা ছিল বিশেষভাবে পারদর্শী। এই দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় রিসালদার মুসলেহ উদ্দিনকে। ‌বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর তাকে অনারারি লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত করা হয়। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসায় হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়েছিল এই মুসলেহ উদ্দিন। মোশতাক-জিয়া চক্র অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় চার নেতা হত্যার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে। আওয়ামী লীগ যাতে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে না পারে, মূলত সে জন্যই জেলে বন্দি চার নেতাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভাবেই খুনিচক্র তাদের সব সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

১৫ আগস্টের পর বঙ্গভবনে বসে ফারুক-রশিদরা ক্যান্টনমেন্টের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখত। তারা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ তাদের ওপর পাল্টা আঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে মোশতাক এ বিষয়ে আলোচনা করেন তার দুই ঘনিষ্ঠ অনুচর কর্নেল ফারুক আর রশিদের সঙ্গে। আলোচনাকালে মোশতাক বলেন, ‘পাল্টা সেনা বিদ্রোহ হলে আমাদের প্রথম কাজ হবে জেলে বন্দি মুজিবের চার বিশ্বস্ত সহকর্মী—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া।’

ফারুক বলল, তাই নাকি?

মোশতাক বলেন, ‘হ্যাঁ তা-ই! খালেদ মোশাররফ শেখ মুজিবের প্রতি সবসময়ই অনুগত। শুধু সে নয়, তার মা, ভাই, পরিবারের প্রত্যেক লোকই। সে যদি বঙ্গভবনে ধাক্কা দেয়, তাহলে তা দেবে শেখ মুজিবের নামেই। আর তখন সে মুজিবের প্রতিনিধি হিসেবে জেলে বন্দি ওই চার নেতাকে সামনে আনবে। খালেদ মোশাররফকে সে সুযোগ দেওয়া হবে না।’

চক্রান্তকারীদের আশঙ্কা মিথ্যা ছিল না, খালেদ মোশাররফ বিদ্রোহ করে, আর এ পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কর্নেল ফারুক তার দলের পাঁচজনকে পাঠিয়ে দেয় ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে। তাদের নেতৃতে ছিল বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের অন্যতম সেই রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন।

সেই কালো রাতের কথা

রাত তখন প্রায় দেড়টা। কেন্দ্রীয় কারাগারের চারপাশে থমথমে নীরবতা। একটি গাড়ি গিয়ে থামল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল গেটে। গেটের পাহারাদার ধমকে উঠল, ‘তোমরা কারা?’ গাড়ির দরজা খুলে বাইরে আসে পাঁচ খুনি। পরনে সামরিক পোশাক, হাতে লাইট মেশিনগান। পাহারাদারদের কাছে গিয়ে মুসলেহ উদ্দিন বলল, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে এসেছি। গেট খোলো। ভেতরে যাব।’

পাহারাদারদের জবাব, ‘না। রাতে ফটক খোলা যাবে না। হুকুম নেই।’ সঙ্গে সঙ্গে মুসলেহ উদ্দিনের চিৎকার, ‘গেট খোলো। নইলে বিপদ হবে বলছি।’

মূল গেটের সামনে এভাবে কথাবার্তা চলতে থাকে। একসময় রাত ৩টা বেজে যায়। গেটের সামনে চিৎকার, শোরগোলের কারণে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব প্রিজন কাজী আবদুল আউয়ালকে খবর দেওয়া হলো। তিনি এসে বললেন, ‘বাইরের কেউ রাতে জেলে ঢুকতে পারবে না। এটাই আইন এবং নিয়ম। আমাদের তো সেই আইন মেনে চলতে হবে।’

এতে মুসলেহ উদ্দিনের গলা একটু শান্ত হলো আর একটু নিচুস্বরে বলল, ‘আইনের মালিক তো দেশের প্রেসিডেন্ট। তিনিই আমাদের পাঠিয়েছেন। আমরা তারই লোক।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ব্যারিস্টার খোকনের দলীয় পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি 

বাড়ি ফেরা হলো না বাবা-ছেলের

বাংলাদেশের দাবদাহ নিয়ে যা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

অনুষ্ঠিত হলো বিইউএইচএস -এর প্রথম সমাবর্তন

ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে : ম্যাখোঁ

ছেলেদের দোষে ডুবছেন মাহাথির মোহাম্মদ

হিজাব আইন না মানায় ইরানে ব্যাপক ধরপাকড়

তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি চেয়ে হাজারো মুসল্লির কান্না

মানব পাচারের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

১০

ঝিনাইদহে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন

১১

কারিগরির ফাঁকা সনদ মিলল তোষকের নিচে, গ্রেপ্তার কম্পিউটার অপারেটর

১২

ঝিনাইদহে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

১৩

ভোট দিলে যে শহরে মিলবে ফ্রি বিয়ার, ট্যাক্সিসহ নানা সুবিধা

১৪

কুমিল্লায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু

১৫

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুলের সাক্ষাৎ

১৬

চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ

১৭

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী 

১৮

৭৩ বছরে ছাত্র ইউনিয়ন  

১৯

কৃষক খুনের ঘটনায় থামছে না ভাঙচুর ও লুটপাট

২০
*/ ?>
X