
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাধার মুখে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের উত্তর এবং পশ্চিম দিকের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করতে পারেনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ থাকার পর ফিরে যান ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন পরিত্যক্ত মার্কেট অপসারণে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে আজ মঙ্গলবার পরিদর্শনে যান অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদসহ ১৫-২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। পরিত্যক্ত মার্কেটে নানা অসঙ্গতি দেখতে পান তারা। টাউন হল মার্কেটের উত্তর এবং পশ্চিম দিকের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে মৌসুমী ফলের দোকানসহ বেশকিছু অবৈধ দোকান। এতে সড়কে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত ও ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটাচলা করতে দুর্ভোগে পড়ছিলেন। দোকান উচ্ছেদে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসানো ৯টি দোকানের মালিককে ৯০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। ৩টি দোকানের মালিক ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিয়ে ডিসিআর গ্রহণ করেন। অন্য ৬টি দোকানের মালিকও জরিমানার অর্থ পরিশোধে রাজি হন। ডিসিআরে তাদের তথ্য লেখার সময় ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদের সাথে তর্কবিতর্কে জড়ান তিনি।
সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় বাধা দেন কাউন্সিলর। এ সময় অবৈধ দোকানদার ও কাউন্সিলরের অনুসারীসহ সহস্রাধিক মানুষ জমায়েত হয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, মেয়র, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করেন তারা। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু উপস্থিত জনতার সামনে বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম বন্ধ করে দ্রুত এলাকা ত্যাগ না করলে আমি ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে মোবাইল কোর্ট ও সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করব।’ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা স্থগিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এর আগে মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারে আদর্শ ও স্বাস্থ্যসম্মত কাঁচাবাজার তৈরি প্রকল্পের আওতায় বাজারের ক্রেতা, বিক্রেতা ও বাজার কমিটির নীতিনির্ধারণী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জোবায়েদুর রহমান, স্থানীয় কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু, অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টি নেতা শফিকুল ইসলাম সেন্টু কালবেলাকে বলেন, সিটি করপোরেশনের জোনাল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত মিটিং করেছি। উনি পরিদর্শন করতে গেছেন একা। হকারদের জরিমানা করেছেন ৩০ হাজার টাকা। একপর্যায়ে হকারদের ভিড় জমে গেছে। হকারদের ফল মাদ্রাসায় দিয়ে দিতে চাওয়ায় তারা বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমি যাওয়ার পর হকারদের সরিয়ে দিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছি।
ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ কালবেলাকে বলেন, পূর্বনির্ধারিত একটা বৈঠক ছিল সেখানে। পরিত্যক্ত মার্কেট পরিদর্শনে গিয়েছিলাম, আমাদের অফিসাররা সাথে ছিলেন। টাউন হল মার্কেটে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বেশকিছু অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে। পরে পুলিশ ডেকে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অভিযানে কাউন্সিলর নিজেই সরাসরি বাধা দিয়েছেন।