‘আইনমন্ত্রী-অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে পুলিশ নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বুধবার সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বুধবার সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ।ছবি : কালবেলা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল।

আজ রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন এ প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। বক্তব্য দেন নির্বাচনে এই পানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন সাব-কমিটি পুনর্গঠন নির্বাচন অনুষ্ঠান না করার জন্য জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা যখন প্রতিবাদ জানান তখনই আইনমন্ত্রী-অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে আওয়ামী সমর্থিত সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী ক্ষমতার দাপটে শতশত পুলিশ নিয়ে গত ১৫ মার্চ সমিতির অডিটরিয়ামে প্রবেশ করে এক নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দেয়। পুলিশি আক্রমণে সমিতির সভাপতি প্রার্থী খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার কাজলসহ শতাধিক আইনজীবী আহত হন। নারী আইনজীবারাও পুলিশি নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। পেশাগত দায়িত্ব পালনরত বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। আওয়ামী আইনজীবী ও পুলিশী ভাবে পরবর্তীতে আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তা সত্ত্বেও নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান কার্যকরী কমিটির ছয়জন সদস্য সর্বসম্মত নির্বাচন সাব-কমিটির দুজন সদস্যসহ মোট ১৪ অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নারকীয় তান্ডব আইনজীবী হিসেবে সমাজের কাছে আমাদেরকে হেয় করেছে। এটা শুধুমাত্র আইনজীবী সমাজেরই না, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। এ নির্বাচনকে ঘিরে বিজ্ঞ আইনজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক আগ্রহ ছিল। কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি যে, দেশের অন্য সকল নির্বাচনের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনেও একই ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, দেশের সাধারণ মানুষের আইনের আশ্রয় নেওয়ার শেষ ভরসাস্থল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সমিতিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আমীন আওয়ামী লীগ তাদের সহযোগিরা নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে।

এতে বলা হয়, এই সমিতি নির্বাচনের জন্য বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সমিতির কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও অবৈধ সম্পাদক, যে গতবছর সমিতির নির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল)-কে নির্বাচিত হওয়ার ৪২ দিন পর পুলিশ বহিরাগতদের সহায়তায় সম্পাদকের দপ্তর অবর-দখল করে নেয়। ভোট কারচুপির মাধ্যমে একতরফাভাবে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রথমে একতরফা ভাবে একটি ভগ্নীবাহক নির্বচন সাব-কমিটি গঠন করে। অথ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের রুল ২২ মোতাবেক কার্যকরি কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন সাব-কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। বর্তমান কার্যকরি কমিটিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঘোর সমর্থিতরা সংখ্যার এক পর্যায়ে সাধারণ আইনজীবীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ইতোপূর্বে দলীয় অনুগত নির্বাচন সাব-কমিটির আহ্বায়ককে পরিবর্তন করে সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। যদিও তিনি একজন আওয়ামী লীগের সিনিয়র প্রার্থী ছিলেন তথাপি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐ প্যানেলের সদস্যরা তার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছিলেন। তিনি একজন সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি সহ সাব-কমিটি সর্বসম্মতভাবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা করেছিলেন। ইলেক্ট্রনিক কাউন্টিং মেশিনে (ECM) ভোট গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। সেই মোতাবেক মেশিনে গণণার জন্য ব্যালট পেপার ছাপিয়েছিলেন। গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রার্থী পরিচিত সভা পরিচালনা করেন। যেখানেই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটি বুঝতে পেরে প্রার্থী পরিচিতি সভা শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী তাকে দিয়ে তাদের সরবরাহকৃত ব্যালটে ভোট গ্রহণ ও অনৈতিক ভোট ডাকাতির ফলাফল ঘোষণায় রাজি করাতে না পারলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং তাদের একান্ত অনুগত একজন দলীয় আইনজীবীকে দিয়ে নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করার আয়োজন করে।

চলমান ঘটনা নিয়ে তারা প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছেন উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী একাধিকবার প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া পুলিশের তাণ্ডবে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে। ‘এরপরও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়নি। পুলিশি তাণ্ডবের কোনো দৃশ্যমান প্রতিকার হয়নি। আমাদের দুঃখ, আইনজীবীদের একটি সমিতির নির্বাচনেও পুলিশকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়। এটা বড় লজ্জার বিষয়।’

নতুন নির্বাচন দাবি করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বলেন, অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর ন্যক্কারজনক পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করছি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com