
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা ভোট শুরুর চেষ্টা করলেও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেটি সাংবিধানিকভাবে হয়নি। কারণ এক্সিকিউটিভ কমিটিতে উভয় পক্ষের সাতজন করে থাকবেন। তাদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু আলোচনা ছাড়াই সাতজন একতরফাভাবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করেছেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। উদ্দেশ্য তাদের (আওয়ামীপন্থি) সমর্থিত ব্যক্তিকে নির্বাচন পরিচালনায় বসানো। কোনো এজেন্ডা ও ন্যায্য ঘোষণা ছাড়াই আওয়ামী ফোরামের নেতারা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামানকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয় বলে অভিযোগ করেন।
এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমি প্রার্থী হিসেবে তাকে (মনিরুজ্জামান) জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে নিয়োগ দিয়েছে কে? তিনি বলেন, আমাকে সভাপতি সাহেব, মমতাজ উদ্দিন ফকির সাহেব বসতে বলেছেন।
বিএনপিপন্থি খোকন বলেন, তার (মনিরুজ্জামান) কোনো রেজ্যুলেশন নাই। মনসুরুল হক চৌধুরীর ইচ্ছাকৃত অপমান করেছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে, সে উদ্দেশ্য তাদের সমর্থিত মনিরুজ্জামানকে তারা নির্বাচন পরিচালনার প্রধান বানাবেন। কোনো রেজ্যুলেশন ছাড়া তারা চালাচ্ছিল।
তিনি বলেন, যারা ভোট নিচ্ছিল, অর্থাৎ নির্বাচন পরিচালনা করছিল তাদের আইডি কার্ড আছে, কিন্তু সিগনেচার নেই। নিয়ম অনুযায়ী সব ক্যান্ডিডেটকে দেখাতে হয় কত ব্যালট আছে। কতগুলো ব্যালট ছাড়ছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। বারবার ইনসিস্ট করেছি সবার সামনে, আমি ক্যান্ডিডেট আমাকে দেখান। এক হাজার ব্যালট বেশি আছে এখানে, আমি শুনেছি। উনি দেখায়নি। বাক্সও দেখায়নি। কতজন ডিএজি, এএজি, আর কতজন আওয়ামী লীগের বহিরাগত, তারা একজন একশ ভোট, দেড়শ ভোট সিল মেরেছে।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, যিনি আগন্তুক, যে ভোট নিচ্ছে, এটা কোনো ভোটই না আইনের দৃষ্টিতে। আমরা ল’ইয়ার, সুপ্রিম কোর্টের ল’ইয়ার। সুপ্রিম কোটের ল’ইয়ার জানেন, সারা দেশের আইনজীবীরা জানেন এটা কোনো ভোট হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ইলেকশনে আমি ৯ বার নির্বাচিত হয়েছি। কখনো পুলিশ ভেতরে ঢোকেনি। আজ আমরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছি, উনি বলেছেন আমি জানি না। আমরা কোনো পুলিশে আহ্বান জানাইনি। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে কোনো পুলিশ চাওয়া হয়নি। কোন ক্ষমতাবলে পুলিশ আমার সুপ্রিম কোর্টে ঢুকল। আমার আইনজীবী ভাইবোনদের পুলিশ, এইট পাস সিপাহি পিটাইছে। সাংবাদিকদের পিটাইছে, অনেকে আছে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেছেন। চেম্বারে ঢুকে ঢুকে মারছে। বিচার করতে হবে মাননীয় প্র্রধান বিচারপ্রতি। এর বিচার করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ভোট নাই, এখানে ভোট হচ্ছে না। ভোট হচ্ছে না এখানে। কয়েকজন ডিএজি, এএজি ইয়ে করে… মেরে ব্যালট ছিড়তেছে। ভোট হচ্ছে না আমি ওখানে ছিলাম। দেখে আসছি। ভোট শুরুই হয়নি। কোনো ভোট হচ্ছে না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়শেন নির্বাচনে নতুন করে তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। দেশের প্রধান বিচারপতি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি আপনার কাছে আমরা চারবার গিয়েছি এ পর্যন্ত। আপনি দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্ট আপনার। আপনাদের। আপনি সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক। আপনি দেশের আইনজীবী, আইন জগতের অভিভাবক। সুতরাং আপিল বিভাগ, মাননীয় প্রধান বিচারপতি অনতিবিলম্বে এই সুপ্রিমকোর্টে অবৈধ কার্যক্রলাপ বন্ধ করুন।
তিনি বলেন, যেসব পুলিশ অফিসার, পুলিশ সিপাহি আমার আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ করেছে, আঘাত করেছে, মারপিট করেছে, আহত করেছে, সাংবাদিকদের আহত করেছে। তদন্ত করে তাদের বিচার করতে হবে। নতুন করে তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। সেই নির্বাচন ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা করে সকল সিনিয়ররা বসে তারিখ নিধারণ করবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের বৈধতা নেই, সুতরাং অবৈধভাবে কেউ যদি নির্বাচনের নাটক সাজায়, কিংবা নাটক মঞ্চস্থ করে সেটা কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে এবং বিজ্ঞ আইনজীবী সদস্যরা গ্রহণ করবেন না। এই জন্য আমরা বলছি কোনো ভোট, কোনো নির্বাচন হচ্ছে না।
এ সময় এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমাদের আন্দোলন চলবে। আজকেও চলবে, কালকেও চলবে, যে পর্যন্ত নতুন তারিখ নিধারণ না হবে নির্বাচনের, সে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। পাশাপাশি সাংবাদিক ও আইনজীবী ভাইবোনদের ওপর হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত দুই দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।