বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০১:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উত্তপ্ত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, সাংবাদিক-আইনজীবীদের মারধর

উত্তপ্ত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, সাংবাদিক-আইনজীবীদের মারধর

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর আগে দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল ১০টার দিকে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা এর প্রস্তুতি নিলেও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ভোট শুরু না করার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী নেতারা।

এদিকে, ভোট ঘিরে বিক্ষোভে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকসহ আইনজীবীদের ওপর রাইফেল দিয়ে পুলিশ মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া মারধরের সময় বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেনের ক্যামেরাও টেনে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে এবং তাকে আহত করা হয় বলে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়। এসব ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ।

জানা গেছে, পুলিশের লাঠিচার্জ ও হামলায় আহত হয়েছেন এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেন, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মারুফ, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপারসন মেহেদী হাসান মিম, জাগো নিউজের রিপোর্টার ফজলুল হক মেধা, আজকের পত্রিকার রিপোর্টার এস এম নূর মোহাম্মদসহ আরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী।

এক সাংবাদিক বলছেন, ‘আমি দুজনকে অনুরোধ করেছি যে, ভাই আমি সাংবাদিক, নিউজ করার জন্য এসেছি। ওই সময় আমাকে অন্তত ১০টি লাথি-ঘুসি দেওয়া হয়। এ ছাড়া আমাকে ফেলে দিয়ে কলার ধরে উঠিয়ে আবার ফেলে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে আমাকে চড়-থাপ্পড়ও দেওয়া হয়। পরে পুলিশকে এসব বলা হলে তারা অস্বীকার করে দাবি করে, এসব ঘটনা তারা ঘটায়নি।’

এরই মধ্যে এসব ঘটনার বিচার দাবি করে স্লোগান তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলা কেন? আমরা এর বিচার চাই’।

বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বলছেন, তারা ‘অবৈধ’ নির্বাচন মেনে নেবেন না। এ সংক্রান্ত স্লোগানও তুলছেন তারা।

এর আগে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আজ সকাল ৭টা থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে শত শত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এ ছাড়া সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। সকাল ৭টা থেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা সমিতি প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত হন।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রায় তিন হাজার ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পদত্যাগ করার পর সমিতির বিএনপি ও আওয়ামী সমর্থক নেতারা আলাদা দুজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন।

এ অবস্থায় আজ বুধবার এই ভোট কীভাবে হবে, কার পরিচালনায় ভোট হবে—এমন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলছিল না। যদিও আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী নেতারা জানিয়েছিলেন, ভোট বুধবার সকাল ১০টা থেকেই অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া বিএনপি সমর্থক আইনজীবী নেতারা জানিয়েছিলেন, বুধবার ৯টার মধ্যে আশা করি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রধান বিচারপতি সুষ্ঠু সমাধান করে দেবেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৩-২৪ সেশনের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়। আজ ১৫ ও আগামীকাল ১৬ মার্চ দুই দিনব্যাপী এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদে একটি, সহসভাপতি পদে দুটি, সম্পাদক পদে একটি, কোষাধ্যক্ষ পদে একটি, সহসম্পাদক পদে দুটি এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যপদে সাতটি পদসহ সর্বমোট ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন নিয়ে শুরুতেই বিভেদ দেখা দেয়। পরে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করেন। তবে একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ভোট গণনার মেশিন ব্যবহার করতে চাইলে বর্তমান সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল তাতে বাধা দেন। তিনি ব্যালট পেপারে ভোটের পক্ষে মত দেন। এ নিয়ে বিরোধের জেরে মনসুরুল হক পদত্যাগ করেন।

এ অবস্থায় গতকাল বিএনপি ও আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা ফের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন। সমিতির আওয়ামী ফোরামের নেতারা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামানকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নিয়োগ করে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বার সমিতির সাবেক সহসভাপতি এ এস এম মোক্তার কবিরকে প্রধান করে একটি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন করেন। বিষয়টি নিয়ে দিনভর দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা যায়। রাতে কে বা কারা প্রায় তিন হাজার ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলেন। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ব্যালট ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকে দুপক্ষ। ফলে বুধবার (আজ) সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হবে কিনা, তা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিন মামলায় মামুনুল হকের জামিন 

বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে সাবেক আর্জেন্টাইন তারকা

ঢাকার ভবন মালিকদের হুঁশিয়ারি দিলেন মেয়র তাপস

এফডিসিতে হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মানববন্ধন 

সেই নারী কাউন্সিলর চামেলীকে দল থেকে বহিষ্কার

তীব্র গরমে বিশ্বজুড়ে বছরে ১৮৯৭০ শ্রমিকের মৃত্যু

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ

যুদ্ধের মধ্যেই মন্ত্রীকে আটক করলেন পুতিন

সকালে ইসতিসকার নামাজ আদায়, রাতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি

তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা

১০

অফিসার নিয়োগ দেবে কাজী ফার্ম, আবেদন করুন দ্রুত

১১

হিট স্ট্রোকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যু

১২

অন্তঃসত্ত্বা নারীর চিকিৎসা করলেন না ডাক্তার, সমালোচনার ঝড়

১৩

টাইগারদের সঙ্গে সিরিজের জন্য জিম্বাবুয়ে দল ঘোষণা

১৪

থাইল্যান্ড পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

১৫

চাকরি দিচ্ছে কাজী ফার্মস, নেই বয়সসীমা

১৬

কালবেলায় প্রতিবেদন প্রকাশ / ভূমিদস্যু কামরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০ আইনজীবীর আবেদন 

১৭

আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

১৮

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে / হঠাৎ ইরান সফরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দল

১৯

ল্যাবএইড হাসপাতালে চাকরির সুযোগ, ৪৫ বছরেও আবেদন

২০
*/ ?>
X