
রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে আরবিট্রেটর (সালিশকারক) নিয়োগে সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার জেলা জজের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজরা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বর্তমান ঢাকা জেলা জজ আদালতে যোগদানের পর থেকে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদকে প্রায় ১০০টি মোকদ্দমায় আরবিট্রেটর নিয়োগ করেছেন। আর মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ঢাকার বর্তমান জেলা জজের সাথে যোগসাজশে তার আজ্ঞাবহ ও তার বিশ্বস্ত ২ বা ৪ জন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজকেই আরবিট্রেটর হিসেবে নিয়োগ করান।
মঞ্জুরুল বাছিদ ঢাকার জেলা জজকে নিয়ন্ত্রণ পূর্বক প্রায় সব আরবিট্রেশন (সালিম) মামলায় নিজে কখনো আরবিট্রেটর চেয়ারম্যান হিসেবে থাকায় ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও জেলা জজ আদালতের স্টাফদের কাছে বর্তমান জেলা জজ ও মঞ্জুরুল বাছিদ ‘আরবিট্রেশন সিন্ডিকেট’হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন যা বিচার বিভাগের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।
গত ৫ মার্চ অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ও রিটায়ার্ড জাজেজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শাহজাহান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মাহমুদুল কবির এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদার আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির কাছে এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করছি। অভিযোগ করলেই তো আর হলো না। তদন্ত করার পর সত্যতা পেলে আমি ব্যবস্থা নেব।’
অভিযোগের বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘আরবিট্রেশন সিন্ডিকেট বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। এ ধরনের সিন্ডিকেট বিচার বিভাগের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এ বিষয়ে তদন্ত হলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। আইনমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ৩০০ জন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ আছেন। তাদের প্রায় সবাই ঢাকায় বসবাস করছেন।
‘চাকরি জীবনে তারা অত্যন্ত সুনামের সাথে চাকরি করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং কেউ কেউ বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত। তা ছাড়া অনেকের ছেলেমেয়ে কর্মজীবনে আশানুরূপ সফলতা লাভ করতে পারে নাই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে তাদের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে ওকালতি ও অনেকে আরবিট্রেটর হিসেবে কাজ করে আসছেন।’
রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ পাস হওয়ার পর বর্তমানে ঢাকার জেলা আদালতে প্রতি বছর কম-বেশি ৩০০ আরবিট্রেশন মিস মোকদ্দমা ফাইল হয়। ওই আরবিট্রেশন মোকদ্দমাগুলোতে ঢাকার জেলা জজ সাহেব আরবিট্রেটর হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের নিয়োগ করে থাকেন। ঢাকার সাবেক জেলা জজ এস. এম কুদ্দুস জামানের (বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি) সময় থেকে অধিকহারে আরবিট্রেশন মোকদ্দমা ফাইল ও নিষ্পত্তি শুরু হয়। তিনি প্রায় সবাইকেই (যারা আরবিট্রেশন করতে ইচ্ছুক) বিভিন্ন মামলায় আরবিট্রেটর নিয়োগ করেছেন। তারপর হেলাল চৌধুরী ও মো. শওকত আলী চৌধুরী (বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি) উভয়েই প্রত্যেক আগ্রহী অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজগণকে ২ বা ৩টি করে আরবিট্রেশন মোকদ্দমায় আরবিট্রেটর নিয়োগ করেছিলেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমান জেলা জজ সাহেব ঢাকার আদালতে যোগদানের পর থেকে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদকে প্রায় ১০০টি মোকদ্দমায় আরবিট্রেটর নিয়োগ করেছেন। মঞ্জুরুল বাছিদ ঢাকার বর্তমান জেলা জজ সাহেবের সাথে যোগসাজশে তার আজ্ঞাবহ ও তার বিশ্বস্ত ২ বা ৪ জন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজকেই আরবিট্রেটর হিসেবে নিয়োগ করান। যারা পরবর্তীতে মঞ্জুরুল বাছিদকেই আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করেন। এভাবে তিনি কখনো আরবিট্রেটর বা চেয়ারম্যান হিসেবে জেলা জজ আদালত কর্তৃক নিয়োগকৃত ৯৫ শতাংশ আরবিট্রেশন মোকদ্দমায় যুক্ত থাকেন।
এ ছাড়া জেলা জজ সাহেব কখনো কখনো নিজে নিজে অন্যদের আরবিট্রেটর নিয়োগ করে মঞ্জুরুল বাছিদকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করার জন্য নির্দেশ দেন। কোনো আরবিট্রেটর মো. মঞ্জুরুল বাছিদকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে অসম্মতি জানালে তাদের পরবর্তীতে আর আরবিট্রেটর হিসেবে নিয়োগ করা হয় না।
জেলা জজের এমন আচরণে অনেক সিনিয়র অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজগণও মঞ্জুরুল বাছিদকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে বাধ্য হন। এমনকি অনেক সিনিয়র অবসরপ্রাপ্ত কোনো জেলা জজ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে টেলিফোনে চেষ্টা করেও এ বিষয়ে ঢাকা জেলা জজের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।