মা। শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে মায়া মমতা ও ভালবাসা। সন্তান যে কোন বিপদে পড়লেই মুখ লুকায় মায়ের বুকে। সেই মা নিজ হাতে বালিশ চাপায় হত্যা করেছে ৮ বছরের শিশু সায়িম বাবুকে।
ঘুমন্ত শিশু সায়িমের বুকের ওপর বসে ৫ মিনিট মুখে বালিশ চেপে রেখেছিল মা রেশমা খাতুন। শ্বাসবন্ধ হয়ে যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে সায়িমের নিথর দেহ। তখনি তাকে ছেড়ে দেয় রেশমা খাতুন।
এরপর স্বাভাবিক মৃত্যু সাজাতে নিজেই প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি শুরু করেন মা রেশমা খাতুন। জানান, তার ছেলে ঘুম থেকে উঠছে না। প্রতিবেশীদরা ঘরে গিয়ে দেখেন সায়িমের মরদেহ পড়ে আছে বিছানায়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তানকে হত্যার বর্ননা দেন মা রেশমা খাতুন। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিন দুপুরে এমনই নির্মম ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর পশ্চিম ধানমন্ডির ৩২/১ নম্বর বাসায়।
ঘটনাস্থল ঘুরে নিহত শিশু সায়েম বাবুর বাবা, প্রতিবেশী, বাড়িওয়ালা ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই বাসায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন মাদ্রাসা থেকে বেলা ১১ টার দিকে শিশু সায়িমকে নিয়ে বাসায় আসেন মা রেশমা খাতুন। এরপর দুপুর ২ টার দিকে তার ঘরের জানালা দিয়ে বার বার উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা যায় তাকে। ঘরের বাইরেও বের হয়েছেন একাধিক বার। ওই সময়ই ঘুমন্ত সায়িমকে খুন করেছেন বলে ধারনা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, ৮ বছরের শিশু সায়িম তার বাবাকে অনেক বেশি ভালবাসতো। রাতে ঘুমানোর সময়ও শিশু সায়িম বাবাকে জড়িয়ে ঘুমাতেন। এটাই মেনে নিতে পারেননি মা রেশমা বেগম। স্বামীর ভালোবাসা এককভাবে পেতেই তিনি সায়িমকে হত্যা করেছেন।
ঘটনার দিন দুপুর ২ টার দিকে সায়েমের মা রেশমা খাতুন তার পাশের রুমের ভাড়াটিয়া নার্গিস বেগমকেই প্রথমে ডাকেন।
নার্গিস বেগম কালবেলাকে বলেন, ‘দুপুর ২ টার দিকে রেশমা আমার ঘরে এসে আমাকে বলে সায়েম ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু ঘুম থেকে বার বার ডাকলেও কোন সাড়াশব্দ করছে না। বলেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন আমি তার সাথে তার ঘরে গিয়ে দেখি সায়েম বিছানায় পড়ে আছে। তার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে ।’
তিনি আরও বলেন, ‘সায়েমের মা বার বার বলতেছিল হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। তখন আমারা সায়েমের বাবাকে ফোন করে বাসায় ডাকি। কিন্তু সায়েমের গলায়, নাকে, মুখে দাগ দেখে সবার সন্দেহ হয়। তখন সায়েমের বাবা এসে পুলিশ খবর দেয়। এরপর পুলিশ এসে যখন তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করে তখন সে স্বীকার করেছে যে, নিজেই বালিশ চাপা দিয়ে সায়েমকে মেরে ফেলছে।’
ওই নারী জানান, ‘বাচ্চাটা তার সৎ ছেলে। বাবার সাথে বেশি মেলামেশা করতো। বাবাকে জড়িয়ে ধরেই নাকি ঘুমাতো এটা সহ্য করতে পারতো না সৎ মা রেশমা। তাই জিদেই মেরে ফেলছে।’
‘আমার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করে আপন শ্যালিকাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু সেই শ্যালিকাই আমার ছেলে হত্যা করেছে। আমার ছেলেটার আমি ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ নাই তাই আমি একটু বেশি আদর করতাম। খাওয়াতাম, যা কিনে চাইতো তাই দিতাম। রাতেও আমার কোলের মধ্যেই ঘুমাতো মা মরা ছেলেটা। এটাই নাকি সহ্য হয়নি রেশমার তাই ছেলেটারে মেরে ফেলল।’
‘আমার ছেলেটারে হাফেজ বানাতে চাইছিল ওর মা’ বলেই হু হু করে কান্না শুরু করেন বাবা মাহবুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা যদি এত সমস্যা হতো। তাহলে একবার আমারে বলতে পারতো। আমার ছেলেকে আমি অন্য কোথাও রাখতাম। আমি তো ওরেও (স্ত্রী রেশমাকে) ভালবাসতাম, আমার ছেলেটাকেও ভালবাসতাম। তাহলে কেন আমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য ও (স্ত্রী রেশমা) আমার ছেলেটারে মেরে ফেলল।’
স্ত্রীর শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে ৫ মিনিট বালিশ চাপা দিয়ে রাখছে। ওরে যেন ১০ মিনিট ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড হয় এটাই বিচার চাই।’
ঘটনার পরপরই রেশমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ। হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি এ কে. সাইদুল হক ভূইয়া কালবেলাকে বলেন, ‘ছেলেকে হত্যার অভিযোগে তার বাবার দায়ের করা মামলায় রেশমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’