ঢাকা শহরে খাল ও খেলার মাঠ দখলকারীদের ভূমিদস্যু আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করতে হবে।
আজ রোববার ঢাকার মিরপুরে জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে এসটিএস গ্রাফিটি আর্ট ওয়ার্ক এবং মুক্তির সবুজায়ন শীর্ষক বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এ কথা বলেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়েছে। এ সময়ে অনেক প্রতিজ্ঞা আছে, অনেকের বিরুদ্ধে কথা আছে। এ কথা যেমন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে, তেমনি ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধেও। আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলেছি দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু ভূমিদস্যুরা তো আমাদের ভিটেমাটি দখল করে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কে কথা বলবে?
‘আমাদের খেলার মাঠ দখল করা যাবে না, খাল দখল করা যাবে না। শুধু দখল আর দূষণ, কিন্তু কিছু বলতে গেলে, কিছু করতে গেলেই ভূমিদস্যুরা কেস করে দেয়। টাকা দিয়ে তারা সবকিছু ম্যানেজ করে নেয়।’
খেলার মাঠ উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘এর একটি উদাহরণ কালশী বালুর মাঠ উদ্ধার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন কালশী ব্রিজ উদ্বোধনে এসে বালুর মাঠে কোনো স্থাপনা না করার নির্দেশ দেন। সেদিন আমি বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যেখানে বসে আজ বক্তব্য দেবেন, সেই জায়গাটিই আজ দখল হয়ে গেছে। ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটি এখানে বড় বড় ভবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই ১৫ বিঘা জমি আর দেখতে পারব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেখানে ঘোষণা দিলেন, বালুর মাঠে কোনো ভবন হবে না, খেলার মাঠ হবে।’
আতিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অনেক কিছু করতে চান, কিন্তু তার কাছে সঠিক তথ্য যায় না। আমরা যদি সঠিক তথ্য পৌঁছে দেই, আমার বিশ্বাস এমন আরও অনেক খেলার মাঠ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা রেখে যেতে পারব। আমরা যদি তা করতে না পারি, পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের কাছে প্রশ্ন করবে তুমি মেয়র ছিলা, কাউন্সিলর ছিলা, তোমরা কী করেছ আমাদের জন্য।’
মিরপুর-১০ নম্বরের জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে করা গ্রাফিতি চিত্রকর্ম এবং মুক্তির সবুজায়ন শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মেয়র আতিক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ডিএনসিসির অঞ্চল-২ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান, মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমেদ, শক্তি ফাউন্ডেশনের উপনির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহুরুল ইসলামসহ অনেকে।
আয়োজকরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অন্যতম স্থান ‘মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি’কে কেন্দ্র করে একটি আধুনিক ও সবুজ শিশুবান্ধব গণপরিসর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডিএনসিসির উদ্যোগে শক্তি ফাউন্ডেশন এবং মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জল্লাদখানা স্মৃতিসৌধের বিপরীতে পরিত্যক্ত জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে।
শিশুদের জন্য উন্মুক্ত খেলার জায়গায় লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। এ ছাড়া দুর্গন্ধ যুক্ত ও দৃষ্টিকটু আবর্জনা ডাম্পিং করার সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনকে (এসটিএস) বিখ্যাত কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময় এবং সহশিল্পীরা সাজিয়েছেন নতুন সাজে।