
আনন্দে অন্যরকম দিন কাটল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। নীল রঙের টি-শার্ট ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সংলগ্ন লাল-সবুজ রঙের টুপি পরে মেট্রোরেল ভ্রমণ করেছে পথশিশুরা। ওই সময় গান ও জন্মদিনের স্লোগানের মধ্য দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তারা।
আজ শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবস উপলক্ষে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে ৭০ জন পথশিশুকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণ করা হয়।
ওই সময় তেজগাঁও সরকারি শিশু পরিবার থেকে ৩০ জন মেয়েশিশু ও মিরপুর সরকারি শিশু পরিবার থেকে ৩০ জন ছেলেশিশু উপস্থিত ছিল। বাকি ১০ জন শিশু আনা হয় ঢাকার বাইরে থেকে।
শুক্রবার সকালে মেট্রোস্টেশন শিশুদের উদ্দীপনায় ভরপুর ছিল। সকাল ৯টার দিকে বিআরটিসির ছাদখোলা বাসে করে আগারগাঁও স্টেশনে এসে পৌঁছে শিশুরা। ওই সময় ছেলেদের পরনে ছিল লাল পাঞ্জাবি আর মেয়েদের পরনে লাল সালোয়ার-কামিজ। তার ওপর সবার নীল কালারের টি-শার্ট। মাথায় বঙ্গবন্ধুর ছবি সংলগ্ন লাল-সবুজ রঙের টুপি। প্রত্যেকের হাতে নানা রঙের প্ল্যাকার্ড ছিল। প্ল্যাকার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও লেখা শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তারা মেট্রোস্টেশনে প্রবেশ করে।
মেট্রোস্টেশনে প্রবেশের পর সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে কার্ড নেয় তারা। তারপর নিজের কার্ড নিজে পাঞ্চ করে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যায় শিশুরা।
মেট্রোরেলে প্রবেশ করে নানা ধরনের দেশাত্মবোধক গান ও জন্মদিনের স্লোগান দিতে দিতে মেট্রোরেল ভ্রমণ করে শিশুরা। আগারগাঁও থেকেই উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছে আবার বিআরটিসি বাসে করে মেট্রোরেলের প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুদের। সেখানে কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
তেজগাঁও সরকারি শিশু পরিবার থেকে আসা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ইসরাত জাহান বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। এই প্রথম উঠছি। কাল রাত থেকে খুব আনন্দে ছিলাম ট্রেনে উঠব বলে।’
তাদের সঙ্গে এসেছে বান্দরবানের মারমা জনগোষ্ঠীর নুম্মে ছাই ও তার বড় বোন ছাইয়ু নু। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুম্মে ছাই বলে, ‘এই জায়গায় উঠে আমার খুব ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর সুন্দর নদী, বিল দেখছি। অনেক আনন্দ করছি। দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লেগেছে।’
ট্রেনে উঠেই ফুর্তিতে মেতে ওঠে মিরপুর সরকারি শিশু পরিবার থেকে আসা আরাফাত, সাজ্জাদ, ফারুক ও জাহিদ। তাদের আনন্দ যেন সব আনন্দকে হারিয়ে দেয়।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ফারুক বলে, ‘খুবই ভালো লাগছে। আজকে প্রথম উঠলাম। শহরের অনেক কিছু দেখতে পারছি।’
শিশুদের আনন্দে আনন্দিত তাদের অভিভাবকরা। তেজগাঁও সরকারি শিশু পরিবারের দায়িত্বে থাকা মেঘলা মিলি বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এত সুন্দর আয়োজন করায় তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের শিশুরা মেট্রোরেল সম্পর্কে জানতে পারছে। অনেক কিছু দেখছে। তাদের আনন্দে আমরাও আনন্দিত।’
শিশুদের মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য এ ভ্রমণ করানো হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে আমরা এই আনন্দ আয়োজন করি। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিশুদের মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতার ছাপ দিতে চেয়েছি।’
যে বাসে চড়িয়ে সাফজয়ী ফুটবল কন্যাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল, সেই বাসে করেই মেট্রোরেলে চড়ানো হয় এই শিশুদের। আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ি স্টেশনে কেক কাটা শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার এবং বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাফজয়ী মেয়েদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য আমরা একটি দ্বিতল বাসকে ছাদখোলা করেছিলাম। পরে আরেকটি বাসকেও ছাদখোলা করেছি। এখন দুটি বাসের একটি পদ্মা সেতু ভ্রমণের জন্য এবং আরেকটি ঢাকা শহরের ভেতরে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশুদের জন্য আজকে দুটি গাড়িই এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।’
তিনি জানান, শিশুদের আনন্দভ্রমণের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ছাদখোলা বাস দুটি ব্যবহার করতে চাইলে সাশ্রয়ী ভাড়ায় সেটি নিতে পারবে।
আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেলে করে আগারগাঁওয়ে ফিরে শিশুদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় সংসদ ভবন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ভ্রমণ করানো হয়।