
হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সিন্ডিকেটের মূলহোতা ইকবাল ও তার অন্যতম তিন সহযোগীকে বেশকিছু ডিভাইস ও আলামতসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বুধবার (১৮ মে) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল।
জানা গেছে, ইকবাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন তিনি। মাত্র কয়েক বছরে কোটিপতি বনে গেছেন প্রাইমারির সহকারী শিক্ষক ইকবাল। কোটি কোটি টাকার সম্পদসহ বিলাসবহুল বাড়িও করেছেন নিজ এলাকায়। আর এই সব কিছুই করেছেন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। এই কাজে হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে চাকরী প্রার্থীর নিকট থেকে হাতিয়েছেন টাকা।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গতকাল রাতে র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা মো. ইকবাল হোসেন (৪২) এবং তার ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- রমিজ মৃধা (৩০), মো. নজরুল ইসলাম (৫০) ও মো. মোদাচ্ছের হোসেন (৬২)।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই চক্রটি প্রথমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০-১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাস ও চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলোভন দেখাত। এভাবে তারা বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
র্যাব সূত্র জানায়, নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগদান করে। নজরুল এবং রমিজের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় তারা একে অপরের পূর্বপরিচিত ছিল। চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে সুম্পর্ক গড়ে উঠে নজরুলের। এই সুযোগে সে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রার্থীদেরকে প্রতারক ইকবাল ও রমিজ এর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিত। এছাড়াও, সে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার সময়, স্থান ও পরীক্ষায় গার্ড খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করত।
গ্রেপ্তারকৃত মোদাচ্ছেরও মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় হতে সমাজসেবাকর্মী হিসেবে ২০১৯ সালে অবসর গ্রহন করে। সে ইকবালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করত। এই চক্রে সে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের খুঁজে বের করে প্রতারক ইকবাল ও প্রতারক রমিজ এর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিত।
এছাড়াও, গ্রেপ্তারকৃত রমিজ এই প্রতারক চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকাকালীন ২০২০ সালে ইকবালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে সময় রমিজ তার আর্থিক সংকটের কথা ইকবালকে খুলে বলে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে বলে জানায়।
পরবর্তীতে ইকবাল তাকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সহযোগিতা করার কথা বলে তাকে এই প্রতারক চক্রের সদস্য করে নেয়। ইকবাল এর ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় সে রমিজকে দিয়ে এই কাজ সম্পাদন করাত।