মেট্রোরেলের পর পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২১ স্টেশন বিশিষ্ট ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেলের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল রোববার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নির্মাণ তদারকি পরামর্শদাতা হিসেবে নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডের (জাপান-জেভি) সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। এ প্রতিষ্ঠান তাদের সেবার জন্য পাবে মোট ১ হাজার ৫১৭ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রকল্পে ১২ গ্যাকেজের তদারকির জন্য আহ্বান করা আন্তর্জাতিক দরপত্রে ৬টি কোম্পানি অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত পরামর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয় নিপ্পন। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন নাওকি হুদো (জাপান) ও এম এ এন সিদ্দিক (বাংলাদেশ)।
‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ, যানজট কমাবে মেট্রোরেল’—এ স্লোগানে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল প্রকল্পের ভৌত কাজ আগামী ডিসেম্বরে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে ডিপোর জন্য ভূমি উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবহন খাতের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, এর কাজ শেষ করার সময়সীমা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর।
মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালনা পর্ষদ গত ৭ সেপ্টেম্বর ডিপোর উন্নয়নে একটি জাপানি কোম্পানির নেতৃত্বে যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেলের গ্রাউন্ড ব্রেকিং অনুষ্ঠানের জন্য সময় চাওয়া হবে বলে জানান আয়োজকরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-১ বা এমআরটি-১ নামে পরিচিত এই লাইনটির কাজ শেষ হলে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম হবে।
৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার লাইনটির দুটি অংশ থাকবে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর (বিমানবন্দর রুট) পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ ভূগর্ভস্থ হবে এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল (পূর্বাচল রুট) পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়াল। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ২৪ মিনিট।
বিমানবন্দর রুটে ১২টি স্টেশন থাকবে এবং পূর্বাচল রুটে ৯টি স্টেশন থাকবে। পূর্বাচল রুটের নদ্দা ও নতুনবাজার স্টেশন থাকবে ভূগর্ভে এবং এই দুটি স্টেশন যাত্রীদের রুট পরিবর্তনের জন্য একটি ইন্টারচেঞ্জ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
প্রকল্প নথি অনুযায়ী, হেমায়েতপুর ও ভাটারার মধ্যে চলাচলকারী মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নতুনবাজার স্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ করবে।
যানজট ও দূষণ নিরসনে রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় নির্মিতব্য ৬টি লাইনের মধ্যে দ্বিতীয় হবে এমআরটি-১।
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে উড়াল ও ভূগর্ভস্থ লাইন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এমআরটি-১ প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু করার পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের।
দেরির বিষয়ে এম এ এন সিদ্দিক জানান, মূলত করোনা মহামারির কারণে ভৌত কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। কারণ, অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ সে সময়ে কাজে যোগ দিতে পারেননি।
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পরিবহন—উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক বিবেচনায় গোটা পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না।’
আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের মেট্রোরেল-৬ প্রকল্প আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন জানিয়ে কাদের বলেন, ‘সে শুভ দিনের অপেক্ষায় সবাই। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল-৬ প্রকল্প পুরোটাই উদ্বোধন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমআরটি-১ আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মাণকাজ শেষ হলে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে মাত্র ২৪ মিনিট সময় লাগবে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে জাইকার অর্থায়ন বাংলাদেশের এগিয়ে চলার জন্য নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাইকার মুখ্য প্রতিনিধি ইচিগুতি তমোহিদি, এমআরটি-১ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন তালুকদার প্রমুখ।