বাংলাদেশেও এসেছিলেন অস্কারজয়ী মিশেল

বাংলাদেশেও এসেছিলেন অস্কারজয়ী 
মিশেল

১৩ জানুয়ারি মিস ওয়ার্ল্ড পেজ থেকে একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে বেশ উষ্ণভাবে অভিবাদনটা জানানো হয়েছে ১৯৮৩ সালের মিস ওয়ার্ল্ড মালয়েশিয়াকে। কারণ, তিনি জিতেছেন চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কার। হ্যাঁ, মিশেল ইয়োর শুরুটা এভাবেই। হয়েছিলেন মিস ওয়ার্ল্ড মালয়েশিয়া। এরপর দেশে তো বটেই যুক্ত হয়েছেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে।

তারও আগে হংকং ইন্ডাস্ট্রিতে আলোড়ন তোলেন। শুধু অভিনয় নয়, ধুন্ধুমার মারপিটে হাজির হতেন। নিজেই করতেন দুর্ধর্ষ সব দৃশ্য। থাকত না কোনো স্টান্টম্যান। এ প্রসঙ্গ এলেই বলতে হয়—ইয়েস ম্যাডাম (১৯৮৫), ম্যাগনিফিসেন্ট ওয়ারিয়র্স (১৯৮৭), টুইঙ্কল, টুইঙ্কল, লাকি স্টারস, পুলিশ স্টোরি ৩: সুপারকপ (১৯৯২), দ্য হিরোইক ট্রিও (১৯৯৩) ও হলি ওয়েপন (১৯৯৩) ছবির নাম।

তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দেন ১৯৯৭ সালে। অভিনয় করেন জেমস বন্ড সিরিজের ‘টুমোরো নেভার ডাই’ চলচ্চিত্রে। নায়িকা হিসেবে পাওয়া যায় পিয়ার্স ব্রুসনানের বিপরীতে।

তবে একজন এশীয়র জন্য বিষয়টি এতটা জলবৎ তরলং ছিল না। পরিচালক রজার স্পটিসউডের মনের মধ্যে ছিল খুঁতখুঁত ভাব। তাই পিয়ার্স ব্রসনান নন, মিশেলকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন পিয়ার্স ব্রুসনানের নকলের (ডাবল) সামনে। কঠিন এক স্টান্ট করছিলেন সেই ডাবল। সেখানেই পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে মিশেলকে আরও একবার পরখ করে নেন পরিচালক। ব্যস, এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা। শুধু বন্ড নয়, দুর্দান্ত সব অ্যাকশনে মিশেল মন কেড়ে নেন বন্ড ভক্তদেরও।

এই অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারে মার্শাল আর্টের বড় প্রভাব ছিল। মারকুটে সব ছবি করতে গিয়ে বহুবার সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন জ্যাকি চ্যানকে। একটা পর্যায়ে নামই হয়ে যায় ‘চ্যান গার্ল’।

মিশেলের অন্যান্য আলোচিত কাজের মধ্যে রয়েছে মেমোয়ার্স অব আ গেইশা (২০০৫), সানশাইন (২০০৭), রেইন অব অ্যাসাসিনস (২০১০), কুং ফু পান্ডা ২ (২০১১), ক্রাউচিং টাইগার, হিডেন ড্রাগন: সোর্ড অব ডেসটিনি (২০১৬) ও দ্য লেডি (২০১১)। দ্য লেডি ছবিতে মিশেল এসেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিরূপে।

তবে একপর্যায়ে কাজে ছেদ পড়েছিল এই অভিনেত্রীর। সংসার টিকিয়ে রাখতে অভিনয় ছেড়েছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নারীবিষয়ক ম্যাগাজিন বাসলে মিশেল বলেন, ‘আমার বয়স যখন ২৮, তখন আমার বিয়ে হয় ব্যবসায়ী ও ভালো মনের একজন মানুষ ডিকসন পুনের সঙ্গে। সালটা ছিল ১৯৮৮। তখন আমি অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এটি ডিকসনের পরিবারের চাপের কারণে নয়। কারণ, এশিয়ায় বিবাহিত নারীদের গৃহিণী হতে হয়; কিন্তু কিছুদিন পর দেখি অনেক বিবাহিত অভিনেত্রীও দিব্যি কাজ করে চলেছেন; কিন্তু আমি কীভাবে আবার কাজে ফিরব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। এরপর ১৯৯২ সালে ডিকসন পুনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আবারও কাজে ফিরি।’

সেই ফেরাটা হয়েছিল জ্যাকি চ্যানের বিপরীতে ‘সুপারকপ’ সিনেমা দিয়ে। তুমুল জনপ্রিয়তা পায় ছবিটি। শূন্যদশকের পর আরও সক্রিয় হয়েছেন অভিনয়ে। বিশেষ করে হলিউডে। ৪০ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে এবারই প্রথম অস্কারে মনোনয়ন পান তিনি, বাকিটা ইতিহাস। ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম এশীয় হিসেবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন ৬০ বছর বয়সী ইয়ো। পুরস্কার পাওয়ার পর তার বক্তব্যেও ওঠে আসে সংগ্রামের কথা।

মিশেল ইয়ো গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমার মতো দেখতে সব ছোট ছেলে-মেয়েদের এটি উৎসর্গ করছি। এটি স্বপ্ন ও সম্ভাবনার বাতিঘর। স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে।’

শুধু আমেরিকা বা মালয়েশিয়া নয়, মিশেলের সংযোগ আছে বাংলাদেশের সঙ্গেও। ২০১৮ সালে তিনি এসেছিলেন কক্সবাজারে। জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া শিবিরগুলো ঘুরে দেখেন তিনি। সে সময় বাংলাদেশের মিডিয়াতে কথাও বলেছিলেন এই এশীয়-আমেরিকান তারকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com