
আসিফ আকবর, বাংলা গানের যুবরাজ। ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ অ্যালবামের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠেন। তবে শুরুটা ১৯৯৮ সালে। ‘রাজা নাম্বার ওয়ান’ ছবির প্লেব্যাকে। তার ক্যারিয়ারের রজতজয়ন্তীতে ১০১টি তথ্য নিয়ে লিখেছেন ওয়ালিউল বিশ্বাস
আসিফ আকবরের জন্ম ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চ।
বাবার নাম আলী আকবর। পেশায় তিনি আইনজীবী।
আসিফ জন্মের সময় তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন।
জন্মের এক মাস পর দুই ঘণ্টার প্যারোলে আসিফ আকবরকে দেখতে আসেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। প্রমাণ না মেলায় সাধারণ ক্ষমা পান।
আসিফের মায়ের নাম রোকেয়া আকবর। গৃহিণী।
জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ পোলাও রান্না করা হয়। এটি তার দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকীতে।
বিশেষ পোলাওয়ে সাদা ভাতের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় কয়েকটি তেজপাতা।
টানাটানির সংসারে এ বুদ্ধিটি করেন তার বাবা অ্যাডভোকেট আলী আকবর।
আসিফরা সাত ভাইবোন। পাঁচ ভাই, দুই বোন।
প্রথম স্কুল ছিল আওয়ার লেডি অব ফাতেমা গার্লস হাই স্কুল।
আসিফকে শাসন করতে বড় ছেলে টুলটুলের বেশি মারতেন বাবা।
স্কুলে ভর্তির পরই তাকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক সব অভিযোগ আসতে থাকে।
ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় ঘুসি মেরে সহপাঠীর দাঁত ফেলে দিয়েছিলেন।
সে কারণে অভিভাবক ডাকা হলে বাবা তাকে টিসি দিয়ে দিতে বলেন।
ভর্তি হন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নাম গুলবাগিচা।
পাশের নজরুল একাডেমিতে ভর্তি হন তিনি।
সংগীতে শিক্ষিকা কল্যাণী সেনগুপ্তার অবদান ছিল।
ক্লাস ফোরে থাকতে হঠাৎ একদিন বাসা থেকে উধাও হয়ে যান তিনি।
ফিরে আসেন ১২ দিন পর।
ছোটবেলায় আসিফ বিশ্বাস করতেন মিথ্যা বললে নাক বড় হয়ে যায়।
ভণ্ডুল সিরিজের ভক্ত ছিলেন। সেখানে এমনটাই ছিল।
ক্লাস ফোরে থাকতে ছাদ থেকে পড়ে যান আসিফ।
ভাঙে মাথার পেছনের হাড়।
কুমিল্লা জিলা স্কুলে সিক্সে ভর্তি হন।
ছোটবেলায় গল্পের বইয়ের বাতিক ছিল। বন্ধুরা চাঁদা দিয়ে বই কিনতেন।
স্কুল বয়সেই ক্রিকেটে মজে যান ।
ব্যয়বহুল এ খেলার খরচ জোগাতে বন্ধুরা মিলে সুপারি চুরি শুরু করেন।
কিন্তু তাতেও হতো না। তাই চার্চ থেকে পাওয়া দুধ বিক্রি করে বাকি অর্থ জোগাতেন আসিফ।
ক্রিকেট জীবনে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক গুরু এমদাদুল হক এমদু।
আসিফ খেলেছেন ক্রিকেটারস কুমিল্লা ক্লাবে। সেখানকার কোচ ছিলেন এমদু।
কিছুদিন পর ক্লাব দলটির অধিনায়কও হন আসিফ।
তার হাত ধরে কুমিল্লা জিলা স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়।
তিনি ভাড়াতেও ক্রিকেট খেলতেন।
জাতীয় দলের খেলোয়াড় হাবিবুল বাশার সুমন, জাভেদ ওমর বেলিমদের সঙ্গে খেলেছেন।
খেলার জন্য সে সময় সিগারেটও ছেড়েছিলেন।
সে সময় গালাগালেও ওস্তাদ মাপের ছিলেন।
আসিফের স্ত্রীর নাম সালমা আসিফ মিতু।
১৯৯২ সালের ১০ জুলাই বিয়ে করেন।
মিতু ছিলেন আসিফের খেলার প্রমীলা প্রথম দর্শক।
তাদের বাসায় প্রথম আলাপচারিতায় মিতু আসিফকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করেন।
বয়সে তিনি আসিফের এক বছরের বড়।
কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন।
কলেজে থাকা অবস্থায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশ বিমানে যোগ দেন আসিফ।
সে-সময় পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইমরান খানের সংস্পর্শেও যান। পেয়েছিলেন বেশ কিছু টিপস।
ধানমন্ডিতে প্রেমিকা মিতুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার খেয়েছিলেন আসিফ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের হয়েও ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন আসিফের দল।
বর্তমান অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের কাছ থেকে সে সময় সহযোগিতা পেয়েছিলেন আসিফ।
কলেজ বয়সেই গায়ক হিসেবে তার নাম ছড়ায়।
তার ব্যান্ডের নাম ফিকল বয়েজ।
সদস্য সংখ্যা চারজন—আসিফ, জুয়েল, মাসুদ ও পলাশ।
গান গেয়েও টাকা ইনকাম করতেন এ গায়ক।
সে সময় আর্মিতেও জয়েন করতে চেয়েছিলেন আসিফ।
তিন ভাইকে টপকে আসিফ সবার আগে বিয়ে করেন।
মিতু পালিয়ে এসে বিয়েটা করেন।
অল্প বয়সে বিয়ে হলে আসিফ আর্মি অফিসার হতে পারবেন না—এ ভাবনা থেকে বিয়ে থেকে সরে এসেছিলেন মিতু।
বিয়ের পর বড় ধরনের অর্থ সংকটে পড়েছিলেন আসিফ।
খেলা ছাড়াও শেয়ারবাজারে তিনি ব্যবসা করতেন।
৪০ হাজার টাকা থেকে ১৪ লাখ টাকায় রূপ দিয়েছিলেন।
অনার্স তৃতীয় বর্ষেই প্রথম সন্তান রণর বাবা হন আসিফ।
এ কারণেও কলেজে আলোচনার সূচিতে থাকতেন আসিফ।
কুমিল্লা ব্যান্ডগুলোর প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফিকল বয়েজ।
১৬ হাজার টাকা বেতনে সিলেটের চা বাগানে চাকরি পেলেও করেননি।
গানের ক্যারিয়ারে অবদান রয়েছে গিটারিস্ট ইফতেখার হোসেন পিন্টুর।
তিনি প্রথম আসিফকে ঢাকায় ক্যারিয়ার গড়তে ডাকেন।
১৯৯৭ সালে ঢাকায় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে সংসার জীবন শুরু করেন।
মিঠু থেকে পরিচিত হতে থাকেন আসিফ আকবর নামে।
ঢাকার জীবন মানিয়ে নিতে মোবাইল ফোন ও বাইক কেনেন আসিফ।
সংসার চালাতে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায় নাম লেখান তিনি।
ডলি সায়ন্তনী, বেবী নাজনীনসহ অনেকে তার সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া নিতেন।
ওয়ার্মআপ শিল্পী হিসেবে আসিফ প্রথম মঞ্চে ওঠেন গায়িকা মৌটুসীর শো-এ।
সে সময় গিটারিস্ট পিন্টু আসিফকে বিভিন্ন শিল্পী স্টুডিওতে নিয়ে যেতেন।
তখনই ভালোভাবে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে পরিচয় হয় আসিফের।
সিলেটের একটি অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে গান তারা।
চট্টগ্রামে গাইতে গিয়ে প্রথমবারের মতো অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন আসিফ।
সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমনের অ্যাসিস্ট করেছেন আসিফ।
তাকে আবৃত্তি অ্যালবাম কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন ইমন।
বছরখানেক কাজের পর তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছিল আসিফের।
তবে তারও আগে চলচ্চিত্রে গাওয়ার সুযোগ করে দেন ইমন।
বাদ্যযন্ত্র না জানায় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আসিফকে বের করে দিয়েছিলেন।
আসিফের গাওয়া প্রথম ছবির নাম ‘রাজা নাম্বার ওয়ান’।
গানের শিরোনাম ‘আমার ভাগ্যে তোমারই নাম ছিল যে লেখা’।
এন্ড্রু কিশোরের গাওয়ার কথা ছিল গানটি।
তিনি নেপালে থাকায় এটি গাওয়ার সুযোগ হয় আসিফের।
এর সংগীত পরিচালক ছিলেন শওকত আলী ইমন।
আসিফের প্রথম গানে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন মান্না।
দ্বিতীয় ছবিতে আসিফের সহশিল্পী ছিলেন রুনা লায়লা।
নির্মাতা পিএ কাজল আসিফকে চিনতে না পেরে ফুটফরমায়েশ খাটিয়েছিলেন।
একনজরে আসিফ
প্রথম অ্যালবাম : ও প্রিয়া তুমি কোথায় (২০০১) শখ : ক্রিকেট দেখা, আড্ডা দেওয়া, ঘুরে বেড়ানো খাবার : গরুর মাংস, আটার রুটি, লইট্টা শুঁটকি ড্রেস : জিন্স, টি-শার্ট রং : নীল, কালো ভ্রমণের জায়গা : কুমিল্লা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, নিউইয়র্ক প্রিয় ব্যান্ড : উইনিং, রেনেসাঁ প্রিয় গায়ক : সৈয়দ আব্দুল হাদী, কিশোর কুমার, জেমস প্রিয় গায়িকা : সামিনা চৌধুরী, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, কণঁকচাপা প্রিয় নায়ক : রাজ্জাক, নানা পটেকার, অমিতাভ বচ্চন প্রিয় নায়িকা : ববিতা, জিনাত আমান, শাবনূর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া প্রিয় ব্যক্তিত্ব : হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রিয় উক্তি : হিরোজ নেভার মেইড, দে বর্ন সূত্র: আকবর ফিফটি নট আউট ও গায়ক