আমাদের খাদ্যাভ্যাসে সবচেয়ে পরিচিত অথচ ক্ষতিকর খাবারের তালিকা করলে শুরুর দিকে আসবে চিনির নাম। মিষ্টিমুখ ছাড়া কোনো বেলার খাবারই যেন সম্পূর্ণ হয় না। চিনি খেলে কী ক্ষতি হয় আর কীভাবে চিনি বাদ দেওয়া যায়, তা জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ
সুমাইয়া রফিক
চিনিতে ক্ষতি
দিনে কয়েক কাপ চা তো আছেই। এছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষার কথা ভেবে ফলের যে জুস খাচ্ছেন, তাতেও মিশিয়ে দিচ্ছেন ক্ষতিকর চিনি। পাবলিক হেলথ জার্নালের গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকলে আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোনের (যা সুখের অনুভূতি তৈরি করে) ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ হতে থাকে। দীর্ঘদিন ডোপামিন নিঃসরণ না হলে ধীরে ধীরে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
চিনিতে প্রচুর ক্যালরি থাকায় এটি ক্লান্তি দূর করে ঠিকই, কিন্তু কিছু সময় পর এর রেশ কাটতে শুরু করে। তখন আবার এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয়। ফিরে আসে ক্লান্তি। চিনি মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। যা কিনা ঘুম ঘুম ভাব তৈরি করে ও কাজের গতি কমিয়ে দেয়।
সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে দাঁতের ক্ষয় হয়। শিশুদের ক্যাভিটির অন্যতম কারণ চিনি এবং চিনির তৈরি খাবার।
স্বাদ বাড়াতে এখন প্রায় সব খাবার তৈরিতে চিনি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে মিষ্টি ছাড়া অন্যান্য প্রসেসড ফুডেও চিনির ব্যবহার হচ্ছে।
কেন বাদ দেবেন
ধীরে ধীরে চিনি খাওয়া কমালে মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ বাড়বে। এতে আগের তুলনায় মন খারাপ ভাব কমে যাবে অনেকাংশে। চিনি বাদ দিলে রক্তে ইনসুলিনের ক্ষরণ কমে যাবে। রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। চিনি খুব দ্রুত রক্তের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সহজে ক্লান্তি দূর হলেও দীর্ঘদিন একটানা চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার গ্রহন করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়।
ত্বক উজ্জ্বল হবে চিনি না খেলে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা চিনি খান না, তাদের ত্বক দীর্ঘদিন তারুণ্যদীপ্ত থাকে। শরীরে ইনসুলিন ক্ষরণ বাড়লে ত্বকে কালচে ভাব দেখা দেয়। আর চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলে ইনসুলিন ক্ষরণ কম হয়। এর ফলে ত্বকের তারুণ্য বজায় থাকে। এছাড়াও চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার প্রোটিন লেয়ার নষ্ট করে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয়। ফলে অকালে বুড়িয়ে যায় ত্বক।
সুতরাং বলা যায়, চিনি বাদ দিলে যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হবে। এছাড়া বাড়তি ওজন কমাতে, হার্টের সুস্থতায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোপরি সুস্থ থাকতে খাদ্য তালিকা থেকে চিনি বাদ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
কীভাবে আসক্তি কাটবে?
চিনিকে আসক্তির তালিকায় ফেলেছেন গবেষকরা। সুতরাং হুট করে খাবার থেকে চিনি বাদ দেওয়ার কাজটি করতে যাবেন না। এর পরিবর্তে সুগার সাবস্টিটিউট খান অনেকে। এতে তেমন একটা লাভ হয় না। আসক্তি থেকেই যায়।
চিনি বাদ দিতে হবে সময় নিয়ে এবং নিয়ম মেনে। প্রথমে হিসাব করুন আপনি দৈনিক কতটুকু চিনি খাচ্ছেন এবং কীভাবে খাচ্ছেন।
যদি দিনে চার চামচ খাওয়া হয়, তবে প্রথমে তা অর্ধেক করুন। দুইবেলা চিনির তৈরি কোনো খাবার খেলে সেটাকে একবেলায় আনুন। এরপর এক দিন পরপর চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার খান। সেখান থেকে সপ্তাহে এক দিনে আনুন। সময় নিয়ে চিনি কমালে শরীর ও মনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে না।