ডা. হেমন্ত রায় চৌধুরী
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:১১ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অতিরিক্ত চঞ্চলতাও অসুখ

অতিরিক্ত চঞ্চলতাও অসুখ

বিশ্বব্যাপী অসংখ্য শিশু এডিএইচডি রোগে আক্রান্ত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে পরিণত বয়সে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। বিশেষ ধরনের এ মানসিক রোগে আক্রান্ত শিশুরা অতিরিক্ত চঞ্চল এবং খুব বেশি জেদি হয়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. হেমন্ত রায় চৌধুরী

এডিএইচডি কী

‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার’কে সংক্ষেপে বলা হয় এডিএইচডি। সাধারণত এ সমস্যা শিশুদেরই বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের আকার অন্যদের চেয়ে সামান্য ছোট হয়। রোগটির প্রধান লক্ষণ অতি চঞ্চলতা, অস্থিরতা এবং মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা। এ ছাড়া চাল-চলনে অসংগতি চোখে পড়ে। তাদের আচরণ তাদের স্কুলে ও বাসায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। এমনকি বড় হওয়ার পরও এমন অবস্থা থেকে যায়।

কেন হয়

এই রোগের কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। জেনেটিক কারণকেই দায়ী করছেন বেশিরভাগ গবেষক। আবার কেউ কেউ মনে করেন, শিশুদের ভুল ওষুধ প্রয়োগ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও এডিএইচডি-এর কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের প্রায় চার থেকে ছয় গুণের মতো বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর বয়স চার বছর হওয়ার আগেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

লক্ষণ

সাধারণত এ রোগের লক্ষণগুলো শিশুর তিন-পাঁচ বছর বয়সে প্রকাশ পেতে শুরু করে। শুরুর দিকে সারাক্ষণ ছোটাছুটি করা, চিৎকার করা, প্রশ্ন শোনার আগে জবাব দেওয়া, স্থির হয়ে বসে থাকতে না পারা, অতিরিক্ত লাফালাফি করা, লাফ দিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়ার মতো লক্ষণ থাকে। স্কুলগামী বাচ্চাদের পড়ালেখায় এমনকি খেলাধুলায়ও বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, স্কুলে নিয়মিত জিনিপত্র হারিয়ে বা ফেলে আসা, চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎ কিছু করে ফেলার মতো ঘটনা দেখা যায়। স্বাভাবিক শিশুদের মধ্যে এসব লক্ষণ থাকলেও এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুদের মাঝে নিয়মিত এবং কমপক্ষে ছয় মাস ধরে লক্ষণ দেখা যায়। এসব কারণে শিশুর পড়ালেখা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।

চিকিৎসা

শিশুর মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই একজন পেডিয়েট্রিক নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে কম খরচে সঠিক পরামর্শ পেতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি পরিবারের অন্যদেরও কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।

শিশুর জন্য একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করুন। যেমন সঠিক সময়ে খাবার, ঘুম, পড়ালেখা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক খেলাধুলা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। খাওয়া ও খেলার সময়ে খেলা ইত্যাদি। শিশুকে বুঝিয়ে রুটিন মেনে চলতে উৎসাহ দিতে হবে। পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রুটিন তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তা শিশুর জন্য সহজ হয়।

স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। এসব শিশু চিকিৎসায় বিহেভিয়ার থেরাপিই সবচেয়ে কার্যকর। সবার সম্মিলিত চেষ্টাই শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

শিশুকে কোনো নির্দেশ দিলে সেটি তাকে বুঝিয়ে বলবেন। রূঢ় আচরণ করবেন না। শিশুর ভালো কাজের প্রশংসা করুন, কখনো তাকে পুরস্কৃত করুন।

শিশুর খাদ্যতালিকায় সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। যথাসম্ভব কৃত্রিম রং, চিনি ও প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার বাদ দিতে হবে। তাজা ফলমূল, ফলের রস, দুধ ও দই খাওয়ান।

লেখক : নিউরো রেডিওলজিস্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স, ঢাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটল যুবদল নেতা 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

৮ মাসে সর্বজনীন পেনশন সদস্য ৫৪ হাজার

‘ওরাকল ক্লাউড ওয়ার্ল্ড ট্যুর সিঙ্গাপুর’ এ স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরলেন পলক

সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু

পাবনায় সাংবাদিককে পিটিয়ে পা ভেঙে দিল সন্ত্রাসীরা

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্যে বিরাট সুখবর

গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বিস্ফোরণে চীনা নাগরিক নিহত

প্রেমিকাকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন

১০

লামায় উৎসবের দিনে আগুনে পুড়ল বৌদ্ধ বিহার

১১

চট্টগ্রামে এখনও ঈদের আমেজ

১২

রাবির জনসংযোগ দপ্তরের নতুন প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার

১৩

অনৈতিক সম্পর্কের মামলায় শিক্ষকের কারাদণ্ড

১৪

নদীতে নিখোঁজ ২ বোনের মরদেহ উদ্ধার

১৫

সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যুতে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর শোক

১৬

শ্রীমঙ্গলে তাপদাহে মানুষের নাভিশ্বাস

১৭

ফরিদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন মা-ছেলে

১৮

চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরে গ্রেপ্তার ২

১৯

যশোরে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসে হামলা

২০
*/ ?>
X