নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সিজোফ্রেনিয়া

বিশ্ব সিজোফ্রেনিয়া দিবস
নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সিজোফ্রেনিয়া

মানসিক রোগের ভেতর জটিলতম রোগ সিজোফ্রেনিয়া। এ রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোগটি নিয়ে নানারকম ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচলিত রয়েছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারুক হোসাইন

সিজোফ্রেনিয়া কী

সিজোফ্রেনিয়া তীব্র একটি মানসিক রোগ যার ফলে রোগী বাস্তবতার উপলব্ধি হারিয়ে ফেলেন। প্রায়ই হেলুসিনেশন হয়। অর্থাৎ বাস্তবে ঘটছে না এমন কিছু ঘটতে দেখেন বা শোনেন। আক্রান্তরা অসংলগ্ন কথাবার্তাও বলেন আবার হুট করে একটি বিষয় থেকে আরেকটি বিষয়ে কথা বলা শুরু করেন।

কেন হয়

রোগটির প্রকৃত কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে পারিবারিক ধারাবাহিকতায় এ রোগ হতে দেখা যায়। লন্ডনের কিংস কলেজের একদল গবেষক ধূমপানের সঙ্গে সিজোফ্রেনিয়ার যোগসূত্র থাকার প্রমাণ পেয়েছেন।

লক্ষণ

সাধারণত ১৫-৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে যে কোনো সময় এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ন্যূনতম এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে নিচের লক্ষণগুলো কারও মধ্যে উপস্থিত থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে—

l বাস্তবতার সঙ্গে যার কোনো মিল নেই এমন মিথ্যা বিশ্বাস করতে থাকা। যেমন রোগী ভাবে—আমার কেউ ক্ষতি করছে, মেরে ফেলতে চাইছে, গোপন কথা সব বুঝে ফেলছে বা তার চিন্তাভাবনা অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে।

l হ্যালুসিনেশন হবে। এমনসব ঘটনা দেখবে, শুনবে বা এমন সব শব্দে সাড়া দেবে যা বাস্তবে নেই।

l রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলবে। কেউ কেউ আক্রমণাত্মক আচরণ করতে পারে। কেউ নিজেকে আঘাত করে। কেউ আবার অন্যকে আঘাত করে।

l রোগী নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। কাজে মনোযোগ থাকবে না। অনুভূতি কমে যাওয়ার সমস্যাও হতে পারে।

l ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, ফোবিয়া, ইনসমনিয়া, অ্যাগ্রেশনসহ অনেক লক্ষণ থাকতে পারে।

রোগ নির্ণয়

যেহেতু সিজোফ্রেনিয়া মানসিক রোগ, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও এটি সেভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় না। তবে অন্য কোনো রোগের কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটা বোঝার জন্য অনেক সময় চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করে থাকেন। সাধারণত রোগের ইতিহাস ও লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে রোগ নির্ণয় করেন।

চিকিৎসা

এ রোগে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং, পরিবেশ চিকিৎসা এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে রোগের ব্যাপারে আলাপচারিতা রোগীকে সহায়তা করতে পারে। তবে নির্দিষ্ট ওষুধ বাদ দিয়ে এর কার্যকর চিকিৎসা হবে না। ইসিটি বা শকও বেশ ভালো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। অনেক রোগী ও রোগীর পরিবার এ চিকিৎসাকে ভয় পায়। বাস্তবে এটি নিরাপদ। তবে এটি স্থায়ী পদ্ধতি নয়। দ্রুত অবস্থার উন্নতির প্রয়োজন হলে যেমন সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় ও পরে শক থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। এ রোগের চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ পরিবর্তন করতে হবে।

সতর্কতা

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশকেই প্রায় সারা জীবন চিকিৎসানির্ভর থাকতে হয়। এ জন্য রোগী, তার স্বজন এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে রোগটি নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হয়।

পরিবারের কেউ রোগীর সমালোচনা করলে বা অতিরিক্ত আগলে রাখার চেষ্টা করলে রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিবারের সদস্যদের সাইকো-এডুকেশন দিলে ও ফ্যামিলি থেরাপি দিলে রোগীর সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করা সহজ হয়।

এ রোগে রোগীর কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়। এর জন্য পরিবারের অন্যদের সহমর্মী হতে হবে। চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোগীকে কর্মক্ষম রাখার চেষ্টা করতে হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com