জন্ডিসে কী খাবেন

জন্ডিসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। প্রাথমিক অবস্থায় পথ্য দিয়েই এ রোগের নিরাময় সম্ভব। এ সময় এমন খাবার খেতে হবে যেন যকৃত কিংবা পিত্তথলির ওপর কোনো বাড়তি চাপ না পড়ে।
জন্ডিসে কী খাবেন

জন্ডিসের পথ্য

পথ্যের মাধ্যমে জন্ডিসে ক্ষতিগ্রস্ত দেহকোষের পুনরুৎপাদন এবং যকৃতকে ক্ষতির থেকে রক্ষা করা হয়। রোগের শুরুর দিকে রোগীর যখন খাবারের অরুচি থাকে তখন তরল ও নরম খাদ্য অল্প পরিমাণে বারবার দিতে হবে। জ্বর কমলে এবং রুচি বাড়লে ধীরে ধীরে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যাবে। বাড়িতে তৈরি কম তেল ও কম মসলার খাবার রোগীর জন্য ভালো। অল্প করে একটু পরপর সঠিক খাবার খেলে এবং পূর্ণ বিশ্রামে থাকলে এমনিতেই জন্ডিস সেরে যায়। একনজরে দেখে নিন জন্ডিস হলে কী খাবেন—

  • পরিমিত তরল খাবার

জন্ডিস থেকে সেরে ওঠার সবচেয়ে কার্যকর পথ্য হলো বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা বেশি খাওয়া। প্রতিদিন অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তবে এটাও খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি পানের প্রয়োজন নেই। আখের রস, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, তাজা ফলের রস শরীরে পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে সারিয়ে তোলে। তবে রাস্তার পাশের আখের শরবত না পান করে ঘরে তৈরি শরবত খেতে হবে।

  • গোটা শস্য

    কার্বোহাইড্রেট লিভারের কোষকে দ্রুত তৈরি হতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে রিফাইন্ড বা প্রসেস করা শস্যের বদলে ফাইবারযুক্ত গোটা শস্যের তৈরি খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়। লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা ওটস খেতে পারেন। গোটা শস্যে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন থাকে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়।

  • প্রোটিন

    লিভার দ্রুত সুস্থ করতে কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন খাবার খাওয়া প্রয়োজন। খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন রাখুন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল। না হলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়বে। অনেকে মনে করেন, জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী মাছ-মাংসজাতীয় খাবার খেতে পারবেন না। এটা খুব ভুল ধারণা।

  • সবজি

    শাকসবজিতে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’, বিটা ক্যারোটিন, দস্তা, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডসহ অনেক ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। এ খাবারে চর্বি বা ফ্যাট, চিনি বা সুগার এবং লবণের পরিমাণ কম। এ ছাড়া ফাইবার এবং পাচক এনজাইমের পরিমাণ বেশি। তাই সবজি জন্ডিস আক্রান্তদের ডায়েটের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, মুলা, বিট, গাজর, টমেটো, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও পালংশাক, আদা, রসুন জন্ডিস রোগীর জন্য খুব উপকারী।

  • মৌসুমি ফল

    আঙুর, পাকা পেঁপে, তরমুজ, আনারস, পাকা আম, কলা, কমলা, জলপাই, মতো সহজপাচ্য ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে। লেবু, বাতাবিলেবুর শরবত জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো। এগুলো শরীরে পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

  • দুগ্ধজাতীয় খাবার

    জন্ডিস হলে ফুলক্রিম দুধ বা দই, পনির খাওয়া ঠিক নয়। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা যকৃতের জন্য ক্ষতিকর। লো-ফ্যাট দুধের দই খাওয়া যেতে পারে।

  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার

    বেশিরভাগ বাদাম এবং শিম ও মটরজাতীয় শস্য ভিটামিন ‘ই’ এবং ফেনোলিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলোতে সমৃদ্ধ। এসব খাবারে প্রচুর ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। জন্ডিসে প্রতিদিন বাদাম, শিমের বিচি, মটরশুঁটির স্যুপ খেলে ভালো। সামান্য আদা কুচি বা রসুন কুচি, আদার রস বা আদা-চা খাওয়া যেতে পারে দিনে দুয়েকবার। এগুলোও যকৃতের জন্য ভালো।

যা খাওয়া যাবে না

  1. ভাজাপোড়া ও তেল-মসলাদার খাবার যকৃতের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই জন্ডিসের এমন খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন।

  2. চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, কাঁচা লবণ পুরোপুরি বাদ দিতে হবে অন্তত দিন দশেকের জন্য।

  3. প্রোটিন বেশি করে খাওয়া উপকার হলেও লাল মাংস অর্থাৎ গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস খাওয়া যাবে না।

  4. ট্রান্সফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে।

  5. কৃত্রিম প্যাকেটজাত খাবার, কেনা খাবার, প্রক্রিয়াজত জুস-ড্রিঙ্ক পান করবেন না।

  6. ধূমপান, মদ্যপান বা তামাকজাতীয় নেশা বাদ দিতে হবে।

লেখক : অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com