
অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় মানে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া। এ রোগে হাড়গুলো ঘুণে খাওয়া কাঠের মতো হয়ে যায়। ফলে ভেঙে যেতে পারে সামান্য আঘাতেই। বয়স্কদের বেশি হলেও এখন কমবয়সীদেরও অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। জানাচ্ছেন ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
কেন হয়
আমাদের দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়তে থাকে। এবং ৩৪ বছর পর্যন্ত সঠিক ঘনত্ব অটুট থাকে। এরপর থেকে হাড় ক্ষয় হতে শুরু হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। পুরুষের তুলনায় নারীদের হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বেশি থাকে। বিশেষ করে মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে মেয়েদের হাড় দ্রুত ক্ষয় হতে শুরু করে। স্বাভাবিক এ বিষয়গুলো ছাড়াও আরও কিছু কারণে কম বয়সে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। সেগুলো হচ্ছে—
পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম না করলে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হলে হাড় নাজুক হতে থাকে।
শরীরের ওজন উচ্চতার সঙ্গে মানানসই না হলে অর্থাৎ ওবেসিটি থাকলে।
অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান করলে কম বয়সে হাড় ক্ষয় শুরু হতে থাকে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমিষ নিয়মিত গ্রহণ করতে থাকলে এবং বেশি চিনি, অতিরিক্ত চা/কফি/চকলেট ও কোমল পানীয় গ্রহণের মতো অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অতিরিক্ত অস্টিওপোরোসিসের অন্যতম কারণ।
দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন।
বিভিন্ন হরমোনজনিত রোগ যেমন—হাইপারথাইরয়িডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়িডিজম, ক্রনিক কিডনির অসুখ, ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে।
লক্ষণ
পিঠের দিকে অল্পস্বল্প ব্যথা দিয়ে অসুখের সূত্রপাত হলেও বেশিরভাগ মানুষ অবহেলা করেন। যখন বেশি ব্যথা হয়, তখন বুঝতে হবে হাড়ের ক্ষয় অনেক বেড়ে গেছে।
প্রতিকার
কম বয়স থেকেই সুস্থ জীবনযাপন মেনে চললে অস্টিওপোরোসিস ঠেকানো সম্ভব। রোগ যদি শুরু হয়েই যায় সে ক্ষেত্রে শুরুতে নির্ণয় করা গেলেও নিয়ম মেনে বিপদ কাটানো যায়।
বয়স ৩৫ হলেই বিএমডি অর্থাৎ বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট করে হাড়ের অবস্থা জেনে নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজের অভাব হলে হাড় নরম হয়ে যায়। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার দুধ, দই, ছানার যে কোনো একটি রাখুন প্রতিদিনের খাবারে। সবচেয়ে ভালো ফল পেতে সকালে এক বাটি দই এবং রাতে শোবার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন।
দুধে অ্যালার্জি থাকলে সয়াদুধ, টোফু, মাশরুম, সবুজ শাকসবজি ও বাদাম খেতে হবে নিয়মিত। মাছ, মুরগি, ডিম থেকেও প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য শরীরের প্রয়োজন হয় ডিটামিন ডি। ভিটামিন ডি-এর সবচেয়ে কার্যকর উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। খাবার থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন। পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ, কড লিভার অয়েল খান।
প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটা, দৌড়ানো ও সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা ভালো ব্যায়াম। এতে শরীরের নিচের অংশের হাড় মজবুত হবে।
ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ধূমপান ও মদপান ত্যাগ করুন। অতিরিক্ত ওজন থাকলে সাবধানে চলাফেরা করুন এবং যথাসম্ভব ওজন কমাতে চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত চিনি, লবণ, চা-কফি গ্রহণ করা যাবে না। প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি