অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার

অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার

অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার হলে একজন মানুষ ক্রমাগত অকারণ দুশ্চিন্তা ও নেতিবাচক চিন্তায় আক্রান্ত হন। এতে তার পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের অসুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেনও থাকতে পারে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আফরোজা জারিন

অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার কী

আনন্দ, বেদনা, দুশ্চিন্তা এগুলো জীবনের স্বাভাবিক আবেগ। জীবনের নানা সময় এসব আবেগ আমাদের গ্রাস করে। সময়ের সঙ্গে আবার তা কেটেও যায়। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় উদ্বিগ্নতা বা দুশ্চিন্তা যদি কারও সামাজিক জীবন, কর্মজীবন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তাহলে বিষয়টি আর স্বাভাবিক থাকে না। তখন এটি রোগে পরিণত হয়। চিকিৎসার ভাষায় একে অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার বলা যায়। রোগীদের মনে বারবার কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা আসতে থাকে, সেই মানুষটি এসব চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে অনেক চেষ্টা করলেও সবসময় সম্ভব হয় না, এর পাশাপাশি শারীরিক কিছু উপসর্গ যেমন ঘেমে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা, মাথা ঘুরছে মনে হওয়া, বুক ধড়ফড় করা।

লক্ষণ ও উপসর্গ

এ রোগের লক্ষণগুলোকে মানসিক ও শারীরিক দুই ভাগে ভাগ করা যায়। মানসিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে—কোনো বিষয় নিয়ে অহেতুক অতি দুশ্চিন্তা, যে কোনো বিষয়ে সহজেই বিরক্তি প্রকাশ, কথায় বা কাজে মনোযোগের অভাব ও অস্থিরতা। শারীরিক লক্ষণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—দুশ্চিন্তা হলে বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম বা বুকে চাপ অনুভব। শ্বাসকষ্ট বা বুকে অস্বস্তি বা জোরে করে শ্বাস নেওয়া, জিভ শুকিয়ে যাওয়া, পাতলা পায়খানা, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া। বারবার প্রস্রাব, পেটে গ্যাস বা ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া খিটখিটে অনুভব করা, মাথাব্যথা করা, গায়ে ব্যথা করা, কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া শরীরে ব্যথা করা, দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, ঘুমাতে না পারা, ঘুমালেও বারবার ঘুম ভাঙা ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।

চিকিৎসা

প্রথমেই রোগী এবং তার পরিবারকে রোগের বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং একজন অভিজ্ঞ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। আমাদের দেশে সব সরকারি হাসপাতালে মানসিক রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সাইকোথেরাপি ও ওষুধ—এ দুইয়ের সমন্বয়ে চিকিৎসা হলে ধীরে ধীরে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। রোগীকেও তার রোগের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে। রোগীর আত্মবিশ্বাস রোগ নিরাময়ে খুব জরুরি। রোগীকে ধীরে ধীরে তার যে বিষয় নিয়ে কারও দুশ্চিন্তা তৈরি হচ্ছে সেটার সম্মুখীন হবে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবিলা করে দুশ্চিন্তা প্রতিরোধ করা শিখতে হবে। পুরো বিষয়টিতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি পরিবারের অন্যদেরও সাহায্য করতে হবে।

রোগের প্রকারভেদ

লক্ষণভেদে এ রোগকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়—

ষ সামগ্রিক উদ্বিগ্নতা

কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই রোগী চিন্তা করতে থাকে। যে কোনো সাধারণ বিষয় নিয়েও অলীক কল্পনা বা অতি দুশ্চিন্তা করে। কখনো আবার রোগী কী নিয়ে চিন্তা করে নিজেও বলতে পারে না পরিষ্কার করে।

ষ অতি-আতঙ্ক বা প্যানিক ডিজঅর্ডার

প্যানিক ডিজঅর্ডারে রোগীর আতঙ্ক হঠাৎ করে তীব্র হয়। তীব্র আতঙ্ক বা ভয়ে হাত-পা জমে আসে এমন অনুভূতি হয়। হাত-পা কাঁপুনি, ঘাম বা বুক ধড়ফড় করতে পারে।

ষ সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার

এ ক্ষেত্রে লোকে আমাকে কী বলবে, কী ভাববে, আমার সবকিছু সবার মনমতো না হলে কী হবে এই ধরনের চিন্তা নিয়ে রোগী অস্থির বোধ করে। পাশাপাশি আশপাশের সবাইকে অস্থির করে তোলে।

ষ অতি-ভীতি বা ফোবিক ডিজঅর্ডার

এই রোগীরা তার চেনা স্থানের বাইরে উন্মুক্ত কোনো জায়গায় আসতে ভয় পায়। কিংবা কাছের মানুষ দূরে গেলে তাকে হারিয়ে ফেলার তীব্র আতঙ্কে অস্থির হয়ে থাকে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com