
রাগ সহজাত ও স্বাভাবিক আবেগ। অন্যান্য আবেগের মতো রাগও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা উচিত। তবে সবার রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এক হয় না। নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা স্বাস্থ্যের ওপর খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বখ্যাত মায়োক্লিনিকের ওয়েবসাইট থেকে রাগের ক্ষতিকর দিক এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় জানাচ্ছেন ডা. রুমানা স্বাতী
গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত রাগ হৃদরোগের কারণ। টানা দুই ঘণ্টা রেগে থাকলে তা ব্রেইন স্ট্রোকের কারণও হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় রাগ। রাগে শরীরের নার্ভ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তাই মস্তিষ্কের রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। এতে রক্তনালি ছিঁড়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আবার রেগে থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়। এতে ফুসফুসেও চাপ পড়ে। তখন ফুসফুসে অতিরিক্ত রক্তের প্রয়োজন পড়ে। সেটার জোগান দিতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে নানান জটিল রোগের সৃষ্টি হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। অতিরিক্ত রাগ বেশ কিছু মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার ইত্যাদি। মানসিক রোগের সঙ্গে খিটখিটে মেজাজ ও রাগের সম্পর্ক রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। কিছু নিয়ম মেনে চললে রাগ বা যে কোনো নেতিবাচক আবেগ আয়ত্তে থাকবে।
রাগ নিয়ন্ত্রণে আনতে
রাগ উঠলে প্রথমেই যে কারণে রাগ হচ্ছে সেই জায়গা বা ব্যক্তি থেকে দূরে সরে যান। অন্য কোথাও গিয়ে চুপ করে বসুন। এবার পুরো বিষয়টি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করুন। সেখানে নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজের ভুল খুঁজে পেলে অন্যের ওপর থেকে রাগ অনেকটাই কমে যায়।
রাগ কমাতে মনোযোগ প্রাসঙ্গিক বিষয় থেকে অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করুন। ২০ থেকে শুরু করে ০ পর্যন্ত উল্টো গুনতে শুরু করুন। গণনা শেষ হলে চোখ বন্ধ করে পুরো বিষয়টি প্রথম থেকে ভাবুন।
রেগে গেলে এক গ্লাস পানিও পান করতে পারেন। এতে আপনার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং আপনার রাগ কিছুটা কমবে।
যখনই রাগ অনুভব করবেন সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করুন। দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন। অন্যদের সামনে থেকে সরে গিয়ে একা হন। এরপর দমের ব্যায়াম করুন। বড় করে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ দম আটকে রেখে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এই সময়টায় মনে মনে নিজেকে বলুন—‘যাই ঘটুক আমি শান্ত থাকব। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাব না। শান্ত থেকে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার শক্তি আমার রয়েছে। আমি সব পারি।’
রাগ কমাতে কী করবেন
নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে রাগ কমে গিয়ে ধৈর্য বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি প্রতিদিন প্রাকৃতিক বাতাসে হাঁটুন, বড় করে শ্বাস নিন।
হাসার অভ্যাস করুন। প্রাণখুলে হাসুন। গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রাণ খুলে হাসতে জানে, তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশি হয়।
ক্ষমা করার চর্চা করুন। মনের মধ্যে রাগ পুষে রাখলে ক্ষতিটা আপনারই বেশি হবে। তাই কোনো ব্যক্তির ওপর রাগ হলে তার কাছ থেকে সরে আসুন এবং নিজগুণে তাকে ক্ষমা করে দিন। নিজের ব্যবহার নিয়েও খুঁটিয়ে ভাবুন। সবাই সবসময় আপনার মতোই ভাববে এতটাও আশা করা বোধহয় ঠিক নয়। আমরা কেউই অন্যকে বদলাতে পারব না। তবে খুব সহজেই নিজের ইচ্ছা বা প্রত্যাশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
যে কোনো ধরনের মাদক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, মাদক গ্রহণ করলে আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা কমে যায়।
যদি কোনো ভাবেই আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে না আসে, যদি আপনার রাগ আপনার বা অন্যদের লাগাতার ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে সেটিকে শারীরিক অসুখের মতোই গুরুত্ব দিন। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
লেখক : চিকিৎসক, বিআরবি হাসপাতাল