
অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বসন্তের দিনগুলোতে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কেননা এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে এবং রোদের তাপ, ধুলাবালি বেশি থাকে। চোখের অ্যালার্জি, শুষ্কতাসহ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় চাই চোখের বিশেষ যত্ন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. আমির হোসেন
সাধারণ সমস্যা
রোদের তাপ, ধুলা ও দূষণের কারণে বাড়তে পারে চোখের অ্যালার্জি। চোখ প্রায়ই চুলকালে ও লালচে রং ধারণ করলে বুঝতে হবে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিয়েছে। কখনো কখনো রোদে গেলে চোখ জ্বালাপোড়াও করতে পারে। এ ছাড়া চোখ থেকে পানি পড়া, ময়লা জমা, চোখে ব্যথা বা লাল হওয়া, আলো সহ্য করতে না পারা, চোখে ঝাপসা দেখার মতো উপসর্গ থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চোখের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
প্রতিরোধে করণীয়
তীব্র রোদ ও দূষণের কারণে চোখে সমস্যা দেখা দেয়। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন। পাওয়ার-চশমা ব্যবহার করলে ফটোসান ব্যবহার করতে পারেন। রোদে গেলে চশমার পাশাপাশি মাথায় হ্যাট কিংবা ছাতা ব্যবহার করুন।
চোখ সবসময় পরিষ্কার রাখুন। চোখে ধুলাবালু জমতে দেবেন না। বাইরে থেকে এসে ঠান্ডা পানিতে চোখ ধুয়ে ফেলুন। হাত দিয়ে চোখ চুলকানো বা ঘষাঘষি করা যাবে না। এতে চোখের লেন্স বা কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শরীরে পানির ঘাটতি শুষ্ক চোখের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। তাই চোখকে আর্দ্র রাখতে এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। তাজা ফলের রস, ডাবের পানি বা তরল স্যুপও খেতে পারেন। ঘন ঘন চোখের পাতা ফেললে চোখের শুষ্কতার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা ল্যাপটপের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরত্বের দিকে তাকান। কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে শুষ্ক চোখে সমস্যা বাড়তে পারে। দিনে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার বেশি চোখে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে থাকা উচিত নয়।
চোখকে সরাসরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) হাওয়া থেকে রক্ষা করুন। এতে চোখ আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই যেখানে কাজ করেন, তার ঠিক সামনে এসি থাকা চলবে না। ধূমপান শুষ্ক চোখের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার চোখের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এর ফলে চোখে বেশি বেশি জলীয় পদার্থ তৈরি হয় এবং ড্রাই আই বা চোখের শুষ্কতার প্রবণতা কমে যায়। সমুদ্রের তৈলাক্ত মাছে প্রচুর ওমেগা-৩ পাবেন। এ ছাড়া প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, গাজর, কলিজা ও বাদাম রাখুন।
চোখের বিশ্রাম দিতে প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। বিশ্রামের সময় চোখের ওপর পাতলা করে কেটে নেওয়া শসার টুকরো রাখতে পারেন। এটি আপনার চোখ ঠান্ডা ও আর্দ্র রাখতে সহায়তা করবে।
চশমার বদলে কিংবা সৌন্দর্যের জন্য লেন্স ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। লেন্স পরার আগে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। একটানা বেশিক্ষণ লেন্স পরা কিংবা লেন্স পরে ঘুমানো উচিত নয়।।
লেখক : চক্ষু বিশেষজ্ঞ, লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল