গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান জন্মানোর পর রোগটি সেরে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে মায়েদের দরকার সঠিক চিকিৎসা, সচেতনতা ও পারিবারিক যত্ন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. রুমানা স্বাতী
কেন হয়
গর্ভাবস্থায় দেহে রক্তে চিনির ব্যবহার কমে যায়। ফলে ব্লাড সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থা থেকে বেড়ে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১ থেকে ৩ শতাংশ মহিলার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। গর্ভকালীন এ ডায়াবেটিসকে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলে। সাধারণত সন্তান হওয়ার পর এই ডায়াবেটিস সেরে যায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যে কারও হতে পারে। তবে বয়স ৩০-এর পর গর্ভধারণ করলে, গর্ভবতীর ওবেসিটি, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিংবা পরিবারে ডায়াবেটিসের পূর্ব ইতিহাস থাকলে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ঝুঁকি
গর্ভবতীর ব্লাড সুগার বেশি থাকলে মায়ের সঙ্গে বাচ্চারও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হলে গর্ভবতীর রক্তে চিনির পরিমাণ যথাসম্ভব কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। যদি সময়মতো ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে সন্তান হওয়ার সময় ও পরে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন—জন্মের সময় সন্তানের ওজন বেশি হতে পারে, জন্ডিস বা রক্তে চিনির পরিমাণে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিতে পারে। শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জটিলতা
গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিসজনিত রেটিনার জটিলতা, কিডনি জটিলতা, বিভিন্ন রক্তনালির রোগ আছে কি না শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন। কেননা গর্ভকালে এসব বেড়ে যেতে পারে। যারা উচ্চ রক্তচাপের জন্য থায়াজিড এআরবি-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন, তারা গর্ভধারণের আগেই এগুলো পাল্টে নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন। ধূমপান বা অ্যালকোহল অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
করণীয়
নিয়মিত গর্ভবতীর ব্লাড সুগার মাপতে হবে। দিনে অন্তত দুবার মেপে লিখে রাখুন। কিছুদিন পরপর চেকআপ করান। চেকআপের সময় চিকিৎসককে চার্ট দেখিয়ে করণীয় জেনে নিন।
শরীর যথাসম্ভব সচল রাখুন। সাধারণত
গৃহস্থালি কাজ করার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হাঁটা বা অন্য ব্যায়াম করতে পারেন। তবে ভারী কাজ বা ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন।
যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার খান। চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি দেওয়া খাবার এবং অতিরিক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিন। প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খান। দুপুরে ও রাতের খাবারের সঙ্গে সালাদ খান।
গম, লাল চাল, ভুট্টা ও ভুট্টার মতো গোটা শস্যদানা ডায়েটে রাখতে পারেন। খাবারে অল্প পরিমাণে তেল ব্যবহার করুন। সরিষার তেল বা অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। মাছ ও মুরগির মাংস খেতে পারেন। তবে গরু, খাসি বা অন্য লাল মাংস খাবেন না। নিয়মিত লো-ফ্যাট বা ফ্যাট ফ্রি দুধ ও দই খেতে হবে।
সাদা চিনি ও সাদা আটা খাবেন না। চিনিজাতীয় খাবারের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে খেজুর, ডুমুর ও কিশমিশ খেতে পারেন। মিষ্টি আলু, আলুর মতো মূলসহ সবজি খেতে পারেন। এগুলো খোসাসহ ভাপিয়ে নিন, পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে।
এ সময় ব্লাডপ্রেশার ওঠানামা করতে পারে। তাই অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খাবেন না। প্যাকেটজাত খাবার ও রেডিমেড স্যুপ না খাওয়াই ভালো। গর্ভাবস্থায় ওজন কমানো বা কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া যাবে না। বিস্কুট, কেক, চকলেট ও আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ রাখুন। পরিবর্তে বেশি করে মৌসুমি ফল খেতে পারেন।
প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্লাড সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখার জন্য ওষুধ খান।
লেখক : এইচএমও, ডিএমসি