লক্ষণ
টনসিলাইটিসের সাধারণ উপসর্গ গলাব্যথা ও খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া, গলার স্বর ভেঙে যাওয়া, জ্বর, কানে ব্যথা ও টনসিল ফুলে যায়। পাশাপাশি দুর্বলতা, মুখে দুর্গন্ধ, পেটে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা ও মাথাব্যথা হতে পারে। সাধারণ টনসিলাইটিসের সমস্যা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সেরে যায়। যদি দুই থেকে তিন দিন পরও টনসিলাইটিসের লক্ষণ থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
চিকিৎসা
টনসিলাইটিসের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খেলে এবং নিয়ম মেনে চললে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। তবে বারবার সমস্যা ফিরে এলে সেটিকে ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী টনসিলাইটিস বলে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা ও যত্নের প্রয়োজন হয়। সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে সেটা দেহের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে। ওষুধে কাজ না করলে দীর্ঘমেয়াদি টনসিলাইটিসের চিকিৎসায় অপারেশনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বারবার টনসিলাইটিস হলে এবং এতে অন্য কোনো জটিলতার সৃষ্টি থাকলে টনসিল ফেলে দেওয়াই ভালো। বিশেষ করে ৫-১৫ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলাইটিসের সঠিক চিকিৎসা না হলে ‘রিউমেটিক ফিভার’ নামের মারাত্মক জ্বর হতে পারে। এর কারণে কিডনি ও হার্টের ভালভের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই রোগের সবচেয়ে খারাপ দিক এটি।
ঘরোয়া যত্ন
পুষ্টির অভাব বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে টনসিলাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া স্যাঁতসেঁতে বাসস্থান, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার—আইসক্রিম, ঠান্ডা পানি ও পানীয় বেশি পান এ রোগের কারণ। এগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধের পাশাপাশি নিচের পরামর্শ মেনে চললে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে রোগ মুক্তি ঘটবে।
যথেষ্ট আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন ঘরে রোগীকে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকা যাবে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে আধা ঘণ্টা রোদে থাকুন।
যতটা সম্ভব পুষ্টিকর তরল খাবার খেতে হবে। যতদিন রোগের উপসর্গ থাকবে, নরম খাবার খেতে হবে। ভাতের জাউ, নরম সবজি খিচুড়ি, মাছ বা মাংসের ঝোল দিয়ে খান।
গলাকে বিশ্রাম দিন। যতটা সম্ভব কম কথা বলুন। বিশেষ প্রয়োজনে নিচু স্বরে কথা বলুন। গরম পানিতে তিন বেলা গার্গল করলে আরাম পাবেন। বিভিন্ন ধরনের তরল খাবার—চিকেন স্যুপ, মসলা চা, ভাতের মাড় পান করুন।
হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে গরম পানির ভাপ বা স্টিম থেরাপি নিন। কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করুন।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন। প্রতিদিন নিয়মমতো দাঁত ব্রাশ না করলে মুখ থেকে টনসিলে ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। দিনে দুবার দাঁত ব্রাশের পর মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করুন।
লেখক : নিউরো রেজিওলজিস্ট, ন্যাশলাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল।