
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), ই-কমার্সসহ ডিজিটাল অঙ্গনে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাড়লেও তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে ধীরগতিতে। লিখেছেন শাওন সোলায়মান
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দেশীয় প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণের পরিপূর্ণ পরিসংখ্যান নেই কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের কাছে। ছোট ছোট নমুনায় করা দু-একটি সমীক্ষা থেকে এ বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায় মাত্র।
উইমেন ইন ডিজিটালের সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবী মিলিয়ে ২০১৯ সালে দেশীয় প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল গড়ে ১৩ শতাংশ। ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। ২০২২ সালে এ-বিষয়ক সমীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সেই হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশের বেশি।
একই সংস্থার সমীক্ষা বলছে, নারীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অথবা পরিচালনা পর্ষদে নারী আছেন, এমন প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেশে প্রায় ৩০০টি। এর মধ্যে মাত্র ৬০টির মতো প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বাইরের।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের তথ্যমতে, সংগঠনটির ২ হাজারের বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১২২টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা নারী। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত নারীদের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। তবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব নারীই প্রযুক্তিগত পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করেন বিষয়টি এমন নয়।
বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার বলেন, যারা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজ করছেন, তাদের বেশিরভাগই কাজ করছেন বিপণনে, গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে বা ব্যবসা উন্নয়নে। মূলধারার এবং আধুনিক যে প্রযুক্তি আছে, যেমন প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এআই, আইওটি বা ডাটা সায়েন্সের মতো জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম।
ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরও কম। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও টেক রাজশাহীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ রহমান বলেন, বাংলাদেশে থেকে যারা প্রযুক্তিভিত্তিক ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন, তাদের মধ্যে ২ শতাংশেরও কম নারী।
তবে দেশীয় প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রয়েছে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস এবং মেকাট্রোনিকস প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। তিনি বলেন, প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। প্রতিবছর প্রযুক্তি খাত-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো থেকে ৩০-৩৫ শতাংশ নারী গ্র্যাজুয়েট করেন। কিন্তু ডিজিটাল খাতের কর্মক্ষেত্রে আসে মাত্র ১২-১৫ শতাংশ।
অনলাইন ট্রাভেল অ্যাগ্রিগেটর (ওটিএ) শেয়ারট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাদিয়া হক বলেন, আমাদের দেশে ধরেই নেওয়া হয় যে, নারী মানেই ‘ইনডোর’ এ কাজ করবে। অথচ ডিজিটাল খাতে ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, বিক্রয়োত্তর সেবার মতো পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির সভাপতি রেজওয়ানা খান বলেন, একজন মেয়ে যখন আইটি খাতে পড়াশোনা করে, তখন গুরুত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করেন। সেই মেয়েরা প্রযুক্তিগত পেশায় এলে এ খাতের উন্নতিতে তারা অবদান রাখতে পারবেন।
ডিজিটাল খাতে ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে পারিবারিক সহায়তা ও সমর্থন খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ ক্লাসিফায়েড মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকমের প্রধান নির্বাহী ঈশিতা শারমিন। ঈশিতা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে বৈতনিক মাতৃত্বকালীন ছুটি দিয়েও অনেক নারী কর্মীকে ধরে রাখতে পারি না। সন্তান প্রসবের বিষয় এলেই অনেক নারী কর্মী চাকরি ছেড়ে দেন। কারণ, তারা মনে করেন, সন্তান জন্মদানে কোনো জটিলতা হলে পরিবার তাকেই দায়ী করবে।
উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাসের প্রতিষ্ঠাতা ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, নারীদের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি পর্যায় থেকেও অনেক সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো ঢাকার বাইরে হওয়ায় বেশিরভাগ নারীর কাছে পৌঁছায় না। এ বিষয়ে আমরা ই-ক্যাব এবং উই থেকে কাজ করছি।