কুমিল্লা থেকে মা পাখি আক্তারের সঙ্গে বাবার কর্মস্থল টঙ্গীতে এসেছিল সাত বছরের জান্নাত। অনেকদিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে খুশি ছিল সে। বাবার ভালোবাসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে টঙ্গী থেকে এসেছিল কমলাপুর। সেখানে বাস থেকে নামতেই মায়ের হাতছাড়া হয়ে যায় ছোট্ট জান্নাত। চিৎকার করে কাঁদছিল সে। যান্ত্রিক এ শহরে তার কান্না শুনে এগিয়ে আসে পুলিশ। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসেন মা। জান্নাতকে মায়ের হাতে তুলে দেন পুলিশ সদস্যরা।
শহরের ব্যস্ত এ এলাকায় ছোট্ট জান্নাতকে খুঁজে পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের সবুজবাগ ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট হাসান আল তোয়াহা। কালবেলাকে তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দায়িত্বরত অবস্থায় ভিড়ের মাঝে হঠাৎ করেই একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। তখন আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে ছুটে যান শিশুটির কাছে। কাছে গিয়ে শুনতে পান, বাস থেকে নেমে কমলাপুরের ভিড়ে মাকে হারিয়ে ফেলেছে সে। এরপর তাকে নিয়ে কমলাপুর পুলিশ বক্সে এনে বসানো হয়।
সার্জেন্ট হাসান আল তোয়াহা বলেন, পুলিশ বক্সে এনে বাচ্চাটির কাছ থেকে বাবা-মায়ের ঠিকানা জানার চেষ্টা করি। কিন্তু সে কোনো ঠিকানা বা ফোন নম্বর দিতে পারেনি। তাকে আশ্বাস দিই মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার। স্থানীয় বিভিন্ন কোম্পানির লাইনম্যানকে বিভিন্ন দিকে পাঠাই জান্নাতের মাকে খোঁজার জন্য। আমরাও কমলাপুরের আশপাশে তাকে খুঁজতে থাকি। এর মাঝে ইন্সপেক্টর কামরুল বেগ বুদ্ধি করে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই ঘোষণা শুনে তার মা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসেন পুলিশ বক্সে। তিনিও তার মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে কাঁদছিলেন।
এই ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, দুপুর ১টার দিকে আমরা ছোট্ট জান্নাতকে তার মায়ের হাতে তুলে দিয়েছি। শত ক্লান্তি, শত পরিশ্রমের পর দিনশেষে এই ছোট ছোট আনন্দগুলোই আমাদের প্রাপ্তি।