মধ্যরাতে র‌্যাবের অভিযান, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযানের মধ্যে র‌্যাবের গুলিতে আবুল কাশেম নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও চেয়ারম্যানপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

র‌্যাব বলছে, অভিযান পরিচালনার সময় এলাকাবাসী হামলা করলে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায় র‌্যাব। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, একই গ্রামের সেলিমকে গ্রেপ্তার করে মারধরের কারণ জানতে চাওয়ায় আবুল কাশেমকে গুলি করে র‌্যাব।

আবুল কাশেমের স্ত্রী রমিজা বেগম জানান, শনিবার রাতে বাড়ির পাশে রাস্তায় কয়েকজনের চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান তারা। এ সময় রাস্তায় গিয়ে আবুল কাশেম দেখেন, পাশের বাড়ির সেলিম নামে এক যুবকে কয়েকজন জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা ব্যক্তি টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছেন। আবুল কাশেম তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের র‌্যাব সদস্য পরিচয় দেন এবং কাশেমকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে আবুল কাশেম মাটিতে পড়ে যান। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে মাটি থেকে উঠে হৈচৈ করলে তারা আবুল কাশেমের পেটে গুলি করেন।

নিহতের ছেলে দ্বীন ইসলাম জানান, গুলির শব্দ শুনে গ্রামবাসী বেরিয়ে এলে তারা গুলি করতে করতে একটি মোটরসাইকেল রেখে এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় হুমায়ুন কবির নামে আরেকজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় বাবাকে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে রাত ২টার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের আরেক ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, রাতই তারা আবার এসে মোটরসাইকেলসহ গ্রামের আরও ২৫ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে। তবে কোথায় নিয়ে গেছে, তা এখনো জানতে পারেননি। পোশাক না থাকায় কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই বৃদ্ধ মারা গেছেন। তার নাভির ওপরে একটি বুলেটের চিহ্ন রয়েছে।

ভারগাঁও গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ায় এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে সাদা পোশাকধারীরা গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় হুমায়ুনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পার্শ্ববর্তী গজারিয়া পাড়ায় রোজিনা আক্তার নামে এক পোশাক শ্রমিককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ওই এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। তবে তারা বাহিনীর পোশাকে ছিল না। ফলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা তৈরি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

হুমায়ূনের পরিবারের এক সদস্য বলেন, প্রথমে তো বোঝে নাই যে তারা ডিবি না ব়্যাব। ওইটা জানলে তো আর যাইত না।

র্যাব-১১'র সিইও তানভীর মুহাম্মদ পাশা গণমাধ্যমকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার ঐ এলাকায় একজন নারীকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে র্যাব-১১ এর একটি টিম অভিযান চালায়। এসময় এলাকাবাসী র্যাবের ওপর হামলা করলে আত্মরক্ষার জন্য র্যাব সদস্যরা গুলি চালায়। এতে আবুল কাশেম গুলিবিদ্ধ হন।

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ বলেন, নিহত আবুল কাশেমের মরদেহ হাসপাতালে আছে। সেখানে পুলিশ আছে। কীভাবে মারা গেছেন তা জানা যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com