পরোয়ানাও ফেরত আসে না, বিচারও শুরু হয় না

২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা লিবিয়ায়
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তিন বছর আগে উন্নত জীবনের আশ্বাসে ২৬ বাংলাদেশিকে লিবিয়ায় পাচার করা হয়। সেখানে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় রাজধানীর চারটি থানায় সাতটি মামলা হয়। তদন্ত শেষে ২০২১ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৯৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এসব মামলার চার্জশিট জমা দেয়। পরে ওই বছর ঢাকার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ৭ মামলার চার্জশিট আমলে নিয়ে পলাতক ৮৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে পলাতক আসামিদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। এতে আটকে গেছে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম। বিচার শুরু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার না হওয়া ও তারা কোথায় রয়েছে, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু কালবেলাকে বলেন, ‘লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যার ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। দোষীদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের কেউ বিদেশে থাকলে, দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ মে লিবিয়ায় পাচার হওয়া ২৯ বাংলাদেশিকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। তিন দিন আটক রাখার পর ১৯ মে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করা হয় তাদের। এরপর তাদের গোপন আস্তানায় নিয়ে নির্যাতন করে জনপ্রতি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় মাফিয়ারা। সেখানে আফ্রিকান বন্দিদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে অস্ত্রধারী মাফিয়ারা ট্যাঙ্ক, গাড়িসহ ক্যাম্পে ঢুকে বৃষ্টির মতো গুলি চালাতে থাকে। এতে মামুন, সাকিব, জুয়েল, মানিক, আসাদুল, আয়নাল, জুয়েল, মনির, সজীব, ফিরোজ, শামীম, আরফান, রহিম, রাজন, শাকিল, আকাশ, সোহাগ, সুজন, কামরুল, রাকিবুল, লালচান্দ, জাকির হোসেনসহ ২৬ বাংলাদেশি মারা যান এবং ১২ জন গুরুতর আহত হন।

লিবিয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের শিকার দুই ভুক্তভোগীর পরিবার বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। এ ছাড়া সিআইডি পাঁচটি মামলা করে। মামলার শুরু থেকেই মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতাসহ জড়িত ৮৪ আসামি পলাতক। ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির পর দেশে গ্রেপ্তার হয়ে মানব পাচারকারী শাহাদাত হোসেন এখন কারামুক্ত। ইতালিতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছে মানব পাচারকারী জাফর ইকবাল। তবে ইন্টারপোলে রেড নোটিশভুক্ত চার মানব পাচারকারীসহ অন্য আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রাজধানীর পল্টন থানার মানব পাচারের চার মামলায় ১১৬ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। তাদের মধ্যে মামলার শুরু থেকে ৫১ জন আসামি পলাতক। বাকি ৬৫ আসামি জামিনে। খিলগাঁও থানার এক মামলায় ৩৩ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এর মধ্যে ৫ জন পলাতক, ২৮ আসামি জামিনে। রাজধানীর তেজগাঁও থানার এক মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এর মধ্যে মামলার শুরু থেকে ৭ আসামি পলাতক, ৪ আসামি জামিনে। রাজধানীর তেজগাঁও থানার মানব পাচারের এক মামলায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এদের মধ্যে মামলার শুরু থেকে ২১ আসামি পলাতক, ১২ আসামি জামিনে। মামলার শুরু থেকে মানব পাচারকারীদের মধ্যে আসামি মুন্না মাল, রহিম বেঙ্গলী, আব্দুর রহিম, আলামিন, রুবেল শেখ, সাইফুল ও আসাদুল জামান লিবিয়ায় অবস্থান করছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এ ছাড়া আসামি তানজিম ওরফে তানজিমুল, নজরুল মোল্লা, রাকিব শিকদার, তবিবুর রহমান, মোসলেম উদ্দিন মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

২০২০ সালের ৬ নভেম্বর মানব পাচারকারী হিসেবে ইন্টারপোলের লাল তালিকায় প্রথম বাংলাদেশি মিন্টু মিয়ার নাম আসে। এরপর একই বছরের ২৫ নভেম্বর আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়। তারা হলো আসামি তানজিলুর ওরফে তানজিলুম ওরফে তানজিদ, জাফর ওরফে জাফর ইকবাল, স্বপন মিয়া, নজরুল মোল্লা ও শাহাদাত হোসেন। এর মধ্যে ঢাকা থেকে শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। বর্তমানে সে জামিনে। এ ছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ইতালিতে আসামি জাফর গ্রেপ্তার হয়। তবে এ পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

ঢাকার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটার (এপিপি) কেএম সাজ্জাদুল হক শিহাব কালবেলাকে বলেন, ‘চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল না করায় মামলার বিচার শুরুর বিষয়ে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। আসামি গ্রেপ্তার হোক বা না হোক এ বিষয়ে আদালতে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত। প্রতিবেদন পেলেই এ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালতকে সহযোগিতা করা হবে।’

পল্টন মডেল থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া কালবেলাকে বলেন, এসব মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। বিচার শুরু হলে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পুলিশ সহযোগিতা করবে। পলাতক আসামিদের নিজ এলাকার সংশ্লিষ্ট থানায় পরোয়ানা পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছু নেই।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com