এবারও কেজিতে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ

দোকানে তরমুজ সাজিয়ে রাখছেন এক ব্যবসায়ী।
দোকানে তরমুজ সাজিয়ে রাখছেন এক ব্যবসায়ী।ছবি : কালবেলা

ব্যাপক সমালোচনা থাকলেও খুচরা বাজারে এ বছরও কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করছেন ৬০ টাকা দরে। এতে ৫ কেজির এক পিস তরমুজ ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকায়। যদিও পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনছেন সেই তরমুজ ১৩০ টাকায়। বিগত বছরগুলোতে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির ফাঁদ পেতে অতিরিক্ত মুনাফা করার বিরুদ্ধে সরব হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। পরে তরমুজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে মাঠে নামে মোবাইল কোর্ট। এ বছর নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আপাতত এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর। তবে বাজার পরিস্থিতির ওপর তাদের নজর রয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল রাজধানীর ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে প্রতি কেজি তরমুজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, ওজনে বিক্রি করলে ক্রেতার সুবিধা। সেজন্য তারা ওজনে বিক্রি করছেন। তবে ক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজার থেকে পিস হিসেবে কিনে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা। দাম বেশি হওয়ায় তারা কিনতে পারছেন না। এর প্রতিকারে বাজার নজরদারির দুর্বল ব্যবস্থা দায়ী বলে মনে করছেন তারা।

রাজধানীর রামপুরা বাজার থেকে একটি তরমুজ কিনে বাসায় ফিরছেন তাওহিদুল ইসলাম। মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। ওজন ৭ কেজির কিছুটা বেশি। দাম পড়েছে ৪২০ টাকা। পিস হিসেবে কিনলে দাম কম হতো কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পিস হিসেবে বিক্রি করলেও দোকানিরা আগে ওজন করে দাম ঠিক করে রাখেন। ফলে পিস বা ওজন যেভাবেই হোক—দামের বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

তবে পাইকারি বাজারে ঠিকই পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। বরিশালের পাইকারি বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম দর্জি তরমুজ চাষও করেন। টেলিফোনে তিনি কালবেলাকে বলেন, মৌসুম শুরু হলেও বরই ও পেয়ারার কারণে তরমুজের পাইকাররা এখনো বাজারে আসছেন না। যে জন্য দাম কম। চাষিরা লাভ পাচ্ছেন কম।

কেজি হিসেবে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে কেজি নেই। এখানে হাজার ও শ হিসেবে বিক্রি হয়।

দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল বরিশালের পাইকারি বাজারে ১৩ থেকে ১৪ কেজি ওজনের ১০০ তরমুজ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা, প্রতিটির দাম পড়েছে ২০০ টাকা। ৭ থেকে ৯ কেজি ওজনের ১০০টি বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়, যার প্রতিটির দাম পড়েছে ১৪০ টাকা এবং আড়াই থেকে ৪ কেজি বা এরও কিছুটা বেশি ওজনের ১০০টি বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এর প্রতিটির দাম পড়েছে ৪০ টাকা করে।

বরিশালের রাঙ্গাবালী ও চর কাজলের তরমুজচাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর সঠিক সময়ে ধান কাটার পর ডিসেম্বরের শুরু থেকে তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। ২০২২ মৌসুমে ভালো লাভ হওয়ায় এ বছর চাষে জমির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। ফসলও ভালো, তবে দাম কম থাকায় তারা কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন।

কৃষক ও খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর প্রতি কানি (১ হেক্টরে ৬.২৩ কানি প্রায়) জমি চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি কানিতে কমপক্ষে ৪০ হাজার তরমুজগাছ লাগানো হয়েছে। ভালো ও বড় আকারের তরমুজের আশায় কৃষকরা গাছপ্রতি সাধারণত একটি তরমুজ রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন।

ঢাকার তরমুজের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত সেকশন বেড়িবাঁধ এলাকার কৃষি মার্কেটের তরমুজের পাইকারি ব্যবসায়ী হাসান সিকদার কালবেলাকে বলেন, সিজনের প্রথম সপ্তাহে কেজি হিসেবে বিক্রি হয়েছে। এখন মালের চাপ বাড়ায় কেজি হিসেবে বিক্রি সম্ভব না। তিনি জানান, ঢাকায় ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের ১০০ পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। প্রতিটির দাম পড়ছে ৩০০ টাকা। ৫ থেকে ৭ কেজির ১০০ পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকায়। এই সাইজের প্রতিটির দাম পড়ছে ২৩০ টাকা।

কেজি দরে তরমুজ বিক্রির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এটি এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর থেকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি। আপাতত এ নিয়ে কোনো কথা বলছি না।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে পাইকারি ও খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছিলেন, গত বছর রমজানে তরমুজ নিয়ে অস্থিরতা হয়েছে। সেখানে আমরা বাজারে সিন্ডিকেট পেয়েছি। তখন ক্ষেতে প্রতি পিস ১০০ টাকার তরমুজ বাজারে এনে ৮০০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। বিপণন আইন রয়েছে। তাতে লাভের মাত্রা নিয়ে বলা আছে। এ ধরনের পণ্যে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লাভ করা যায়। নিত্যপণ্যে সেটি আরও কম; কিন্তু ব্যবসায়ীরা করছেন কয়েক গুণ। রমজানে সেটি আমরা আরও কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com