দুলাল হোসেন
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হেলথ রেগুলেটরি কমিশন চান না চিকিৎসক নেতারা

হেলথ রেগুলেটরি কমিশন চান না চিকিৎসক নেতারা

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ তদারকিতে হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রস্তুত করে তা গত বছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এ কমিশনের কাজ হবে জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং সংবিধানে উল্লিখিত স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো কমিশন আইনের খসড়ার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসেবা সচিব অবগত নন—এমনটাই জানিয়েছেন দুজন চিকিৎসক নেতা। কমিশন গঠন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিকিৎসক নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থাকার পরও নতুন করে কমিশন গঠনের প্রয়োজন নেই। এটি করে চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়রানি করা হবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহেতাশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠন নিয়ে আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, এ রকম কমিশন গঠনের বিষয়ে অবগত নন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সচিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন, তিনিও কিছু জানেন না। মন্ত্রী ও সচিব জানেন না, অথচ মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা আইনের খসড়া তৈরি করে

উচ্চ আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উনারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আবারও আলোচনা হবে। তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। এর আগে এটি নিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন বলেছেন, হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠন হচ্ছে বলে শুনেছি। কমিশন গঠন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, এ রকম কমিশন গঠনের বিষয়ে অবগত নন। বিএমডিসির রেগুলেটরি বডি রয়েছে। চিকিৎসক নিবন্ধন, অনুমোদন, শাস্তি—অনেক কিছুই বিএমডিসি করে থাকে। বিএমডিসি থাকার পরও হেলথ রেগুলেটরি কমিশনের কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, যে আইনজীবী হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন, তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিবাদী করেছেন। বিএমডিসিকে বিবাদী করেননি। বিএমডিসি এখন খুবই সক্রিয় একটি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য-শিক্ষা সংক্রান্ত রেজ্যুলেশন তৈরি, মেডিকেল শিক্ষার কারিকুলাম প্রস্তুত, চিকিৎসকদের নিবন্ধন, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে বিএমডিসি। হেলথ রেগুলেটরি কমিশন যদি এ জাতীয় দায়িত্বই পালনের জন্য হয়, তাহলে কমিশনটির প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশীদ বলেন, আরেকটি প্রতিষ্ঠান করার অর্থ হলো বিরোধী মতকে দমন করার মতো অস্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। রোগী যারা ভুক্তভোগী, তাদের জন্য বিএমডিসি ও ফৌজদারি আইনে আছে। সেখানে ক্ষুব্ধ ব্যক্তি ব্যবস্থা নিতে পারে। নতুন করে একটি কমিশন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন পড়বে কেন? কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতির সমান বেতন-ভাতাসহ সুবিধা পাবেন। সদস্যরাও একই সুবিধা পাবেন। একটি পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান করে সেখানে দলীয় লোকদের পুর্নবাসন করা হবে। সেই দলীয় লোকজন দিয়ে বিরোধী মতকে দমন করা হবে। নতুন আইন, নতুন কমিশন একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, খসড়া আইনে কমিশনের কার্যাবলি ও তদন্ত-সম্পর্কিত তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, কমিশন যে কোনো স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে অবাধে ও বিনা বাধায় তদন্ত করতে পারবে। যে কোনো নির্দিষ্ট শাস্তি আরোপের সুপারিশ করতে পারবে। চিকিৎসার গাফিলতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা কর্তৃপক্ষকে অর্থদণ্ড প্রদান করতে পারবে এবং সেই অর্থ রোগীর কল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশ দিতে পারবে। চিকিৎসার খরচের আংশিক বা সম্পূর্ণ অংশ ফেরত এবং কমিশন প্রদানের আদেশ দিতে পারবে। চিকিৎসা, রোগ নির্ণয় বা আনুষঙ্গিক বিষয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করলে ন্যায়সংগত অর্থ ফেরতের আদেশ প্রদান ও অন্যান্য দণ্ডও প্রদান করতে পারবে। যে কোনো ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন প্রদানকারী সংস্থাকে নির্দেশনা বা সংশোধিত আদেশ প্রদান করতে পারবে। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট কোনো ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিশনে পাঠাতে পারবেন। এভাবে মোট ১৯ দফা কার্যাবলি ও তদন্তের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে খসড়া আইনে। আইনে মোট ৩১টি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। যার অধিকাংশই তদন্ত করে সুপারিশ ও পরামর্শ প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

দেশের স্বাস্থ্য খাত নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত। স্বাস্থ্যসেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও তার স্বজনরা। অপচিকিৎসায় প্রায়ই রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। অনেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো ফি আদায়, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এমনই প্রেক্ষাপটে রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে ও দুর্ভোগের প্রতিকার দিতে ‘হেলথ রেগুলেটরি কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ রিট করেন। ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর হাইকোর্ট এ ব্যাপারে রুল জারি করেন। রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘হেলথ রেগুলেটরি কমিশন গঠন আইন-২০২২’ খসড়া প্রণয়ন করে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চে গত বছরের ৬ নভেম্বর এ খসড়া দাখিল করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হামলা চালাতে যাওয়া সব ইসরায়েলি ড্রোন গুড়িয়ে দিল ইরান

১২ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

অটোভ্যান ছিনতাই করে চালককে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

ইরানে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল

৩১ জেলায় আবহাওয়া নিয়ে দুঃসংবাদ

ছুটির দিনটি কেমন যাবে আপনার?

সিনেমা হলের জায়গা বিক্রি, নির্মাণ হবে মাদরাসা

ভারতে লোকসভার ভোট শুরু আজ

পাবনায় চিনিবোঝাই ১২ ট্রাকসহ আটক ২৩

তীব্র গরমে ছয় বিভাগে স্বস্তির খবর

১০

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১১

১৯ এপ্রিল : নামাজের সময়সূচি

১২

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ যেসব আমল

১৩

শুক্রবার ঢাকার যেসব এলাকায় যাবেন না

১৪

ছাত্রলীগ নেতার পা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলেন এমপি

১৫

দাজ্জালের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো যে সাহাবির

১৬

লোহাগড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ / কুপিয়ে জখম ৩

১৭

চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট জারি

১৮

৮০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা, সতর্কতা জারি

১৯

পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন মিতিয়া ওসমান

২০
*/ ?>
X