এলজিইডির টয়লেট নির্মাণে ব্যয় ১০ লাখ টাকা বেশি

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে একটি প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন শীর্ষক এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অনুমোদনে জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে সংস্থাটি। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলার জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের অন্তর্গত পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ব্যয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তুলনায় ১০ লাখ টাকা বেশি ধরা হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

এলজিইডির ওই প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, এই প্রকল্পের আওতায় স্যানিটেশনের মান উন্নয়নে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার ৫টি উপজেলা এবং ৩টি পৌরসভায় ৯টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ, একেকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে খরচ হবে ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে এই খরচ অতিরিক্ত বলছে বিভিন্ন সংস্থার প্রকৌশলীরা। প্রকল্পটি শিগগির তোলা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রকৌশলীরা বলছেন, সাধারণত একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে খরচ হয় ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা। আগের রেট শিডিউল অনুযায়ী, এই খরচেই বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে বর্তমান রেট শিডিউল অনুযায়ী, এ খরচ কিছুটা বাড়বে। তার পরও একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ৩৭ লাখ টাকার বেশি খরচ অতিরিক্ত।

এই ব্যয় যে বেশি, তার প্রমাণ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প। ২৫টি শহরে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন’ শীর্ষক প্রকল্পে ১৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবে সংস্থাটি, যা হবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ও মানসম্মত। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এ প্রকল্পে একেকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে খরচ হবে ২৬ লাখ টাকা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সর্বশেষ রেট শিডিউল অনুসরণ করেই এ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর।

একটি মানসম্মত পাবলিক টয়লেট বলতে কী বোঝায় এবং সাধারণত একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হয়, এটি জানতে কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা বিভাগ) আরিফ আনোয়ার খান কালবেলাকে বলেন, সাধারণত একটি পাবলিক টয়লেটে পুরুষের জন্য ৩টি এবং নারীদের জন্য ২টিসহ মোট ৫টি ইউনিট, প্রস্রাবখানা, পানি পানের স্থান, একটি মাতৃদুগ্ধ স্থান, পোশাক পাল্টানোর রুম এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবস্থা থাকতে হবে। টেকসই এবং স্বাস্থ্যসম্মত এসব সুবিধা থাকলেই তাকে আধুনিক বা মানসম্মত পাবলিক টয়লেট বলা যায়। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, এসব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত পাবলিক টয়লেট ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকার মধ্যে নির্মাণ করা সম্ভব। যদিও চলমান প্রকল্পে পাবলিক টয়লেট নির্মাণে আগের দর অনুযায়ী ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমান রেট শিডিউল অনুযায়ী পাবলিক টয়লেট নির্মাণে খরচ হয় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা। যদি খুব বেশি আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, তাহলেও খরচ হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, চাইলে অনেক বেশি খরচ করা সম্ভব। তবে এর থেকে বেশি খরচ করার প্রয়োজনীয়তা নেই। বেশি টাকা খরচ করে সরকারের টাকা নষ্ট করার তো দরকার নেই। পাবলিক টয়লেট এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে জনগণ লাভবান হয়। দরকার হলে একটির জায়গায় দুটি নির্মাণ করা যাবে। তাতে জনগণ আরও বেশি সুবিধা পাবে।

চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার দাস বলেন, একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করতে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়া খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। উপজেলা বা জেলা শহরে এর থেকে বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়; কিন্তু ৩৭ লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়াটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে।

অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহম্মদ মহসিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। মোবাইল ফোনে বারবার কল করেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণে বাজারমূল্য থেকে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করলে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। কারণ, এর মাধ্যমে কোনো বিশেষ সুবিধা আদায় করতে চাচ্ছে কি না, সেটি দেখা দরকার। যেহেতু অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে কৃচ্ছ্র সাধনের কথা বলা হচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যয় প্রস্তাবকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যদি অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়ে থাকে, তাহলে শুধু অনুমোদন থেকে বিরত না থেকে যারা এই প্রস্তাব করেছে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com