মানি প্লান্টের সাবেক চালকের পরিকল্পনায় ব্যাংকের টাকা লুট

মানি প্লান্টের সাবেক চালকের পরিকল্পনায় ব্যাংকের টাকা লুট
ছবি : সংগৃহীত

সিকিউরিটি কোম্পানি মানি প্লান্ট লিঙ্কের পুরোনো গাড়িচালক সোহেল রানার পরিকল্পনায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ডাকাতি হয় বলে ডিবি পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ওই ঘটনায় জড়িত আরও তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা। তবে গাড়িচালক সেই সোহেল এখনো পলাতক।

ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনার পরিকল্পনায় ছিলেন তিনজন। তাদের মধ্যে আকাশ নামে একজনকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন করে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের কাছ থেকে ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে লুট হওয়া ৭ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার হলো। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১ জনকে। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন মিলন ও হৃদয়। এ দুজনই পেশাদার ডাকাত।

গত সোম ও গতকাল মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। ঢাকার মিন্টো রোডে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে মাস্টারমাইন্ড সোহেল রানা, যিনি এখনো পলাতক। তিনি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী ‘মানি প্লান্ট লিঙ্ক’-এ একসময় গাড়িচালক ছিলেন। তিনি আমাদের নজরদারিতে আছে। যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা যাবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তুরাগ এলাকায় বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা মানি প্লান্ট লিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেডের একটি মাইক্রোবাস আটকে চার ট্রাঙ্ক টাকা নিয়ে যায় একদল ডাকাত।

ওই ট্রাঙ্কগুলোকে ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল বলে মানি প্লান্টের তরফ থেকে সেদিন জানানো হয়। সেদিন দুপুর থেকে বিকালে খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাঙ্ক উদ্ধার করা হয়, সেখানে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল।

টাকা লুটের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভাড়ায় লোক আনা হয় জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, পালিয়ে থাকা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা গেলে ‘সব জানা যাবে’। তিনি বলেন, ঘটনার সময় ১০ থেকে ১২ জন উপস্থিত ছিল। যখন মানি প্লান্ট লিঙ্কের গাড়ি থেকে ট্রাঙ্কগুলো স্থানান্তর করে ডাকাতদের ভাড়া করা গাড়িতে তোলা হয়, তখন একজন উঠতে না পেরে দৌড়াতে থাকেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় ওই ব্যক্তি হলেন আকাশ।

আগে গ্রেপ্তার হওয়া আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হারুন বলেন, আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। তারা জানিয়েছে, এ ডাকাতির ঘটনায় কয়েক স্তরে আলাদা আলাদা দায়িত্ব ছিল। কেউ ছিলেন পরিকল্পনাকারী, কেউ ছিলেন মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ ছিলেন কামলা ও কামলা সংগ্রহকারী।

মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানাই প্রধান। ডাকাতির পরিকল্পনার বিষয়টি সোহেল রানা মো. ইমন ওরফে মিলনের সঙ্গে শেয়ার করে। ইমন জানান সানোয়ারকে। সানোয়ার দায়িত্ব নেয় কামলা (ডাকাত) সংগ্রহের, যাদের নামে একাধিক মামলা আছে এবং বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। এ রকম একজন (আগে গ্রেপ্তার) এনামুল হক বাদশা। যার নামে রয়েছে ২৭টি ডাকাতির মামলা। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ থেকে এ রকম ৯ জনকে হায়ার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দায়িত্ব হচ্ছে ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য ওখান থেকে মোবাইল ও সিম কিনে নিয়ে আসবে।

এর আগে শনিবার ঢাকা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধারসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তারা হলেন আকাশ মাতবর, ইমন ওরফে মিলন, সাগর মাতব্বর, এনামুল হক বাদশা, সানোয়ার হোসেন, বদরুল আলম, মিজানুর রহমান ও সোনা মিয়া। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

ডিবি কর্মকর্তা হারুন জানান, ঘটনাটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১১ কোটি টাকা পরিবহনের সময় অস্ত্রসহ লোক ছিল না এবং অধিকাংশ সময় এভাবে অধিক টাকা পরিবহন হয়। সেইসঙ্গে টাকা পরিবহনের সময় স্থানীয় থানাকেও তারা অবহিত করেনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মানি প্লান্টের কেউ জড়িত ছিল কিনা, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com