উভয়পক্ষেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা

রাবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ।
রাবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ।ছবি : কালবেলা

একটি বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর দ্বন্দ্ব ঘিরে গত শনিবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকা। ৪-৫ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষে অন্তত দুই শতাধিক আহত হন। ছোট্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বিশাল সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উভয়পক্ষেই জড়িত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অবস্থান ছিল প্রকাশ্যে। অন্যদিকে আলোচনায় না এলেও স্থানীয়দের পক্ষে ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে ওই সংঘর্ষ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, সহসম্পাদক সাইফুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি কাবিরুল ইসলাম রুহুল, সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস, উপমুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক নিহাদ, জিয়াউর রহমান হল সভাপতি রাশেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, নবাব আব্দুল লতিফ হল সভাপতি শুভ্র দেব ঘোষ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সহসভাপতি মেজবাহ, সাখাওয়াত হোসেন শাকিল, খালিদ সাইফুল্লাহ, মতিহার হলের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহাসহ ছাত্রলীগের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে ছাত্রলীগের অন্তত ৩৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া দাবি করেন। অন্যদিকে সংঘর্ষে বিনোদপুরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বনিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। মূলত এ হামলা বিনোদপুরের সাধারণ ব্যবসায়ী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। উভয়পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ঢুকে যাওয়ায় এ সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের নেতা আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, রোববার ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ ভিসিকে অবরুদ্ধ এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের আবরার সাঈর ও ক্যামেরাম্যান সহকারীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এগুলো আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকেই হচ্ছিল। কিন্তু তাদের চিনি না। সংগত কারণেই মনে হয়েছে—আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপ-রেজিস্ট্রার

বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন দুটি মামলা করেছে। কিন্তু এ মামলায় মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা-ও তিনি নিরপরাধ। তার মানেটা কী? রাজনৈতিক দলের উভয়পক্ষের সংঘর্ষে নেতৃত্ব দেওয়ায় সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল। আবার দলীয় রাজনীতির কারণেই মামলা হওয়ার পরও জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।’

জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে, এটি শুনে বসে থাকতে পারি না। সেখানে যাওয়ার কারণে আটটি মোটরসাইকেল স্থানীয়রা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ছাত্রলীগ করলেও আগে তো ছাত্র! ছাত্রলীগের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।’

নগরীর মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন,‘মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত করে দেখছি। জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর বলেন, আমিসহ কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। আন্দোলনে ছাত্রলীগ নিয়ে সামনের দিকে যাওয়া ও উসকানি দেওয়ার বিষয়ে বলেন, এসব মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করি।

এদিকে গত রোববার রাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পাশে রেললাইন অবরোধ করে আগুন দেওয়ার নেতৃত্বে ছিল ছাত্রলীগ।

প্রত্যক্ষদর্শী আলফাজ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জান্নাত জারাসহ আগুন দেওয়ার পেছনে বেশ কয়েকজন জড়িত ছিল। পরে এরসঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীও যুক্ত হয়।

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানে সবাই আসবে; কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেব। এখন থেকে সন্ধ্যার পর বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটির জেরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে অবস্থান নেন। সংঘর্ষে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com