ধোলাইখাল হবে আরেক হাতিরঝিল

ধোলাইখাল হবে আরেক হাতিরঝিল

বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে প্রাচীন ঢাকাকে সুরক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগের সুবিধার জন্য প্রথম মোগল সুবাদার ইসলাম খান খনন করেন ধোলাইখাল। সেটা ১৬০৮-১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে। বাবুবাজার থেকে খালটি জিন্দাবাহার, গোয়ালনগর, নবাবপুর, নারিন্দা হয়ে লোহারপুলের নিচ দিয়ে মিশেছিল বুড়িগঙ্গায়। এটি ছিল শহরের যোগাযোগের অন্যতম জলপথ। ঢাকার কলেবর যত বেড়েছে, আধুনিকতার পথে হেঁটেছে, সঙ্গে একটু একটু করে হারিয়েছে ধোলাইখাল। দখল হতে হতে খালটি এখন প্রায় অদৃশ্য। মাত্র ৫ শতাংশ টিকে থাকলেও সেটুকুও অস্তিত্ব হারানোর পথে। এবার ধোলাইখাল জলাধারকে সুন্দর ও নান্দনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ধোলাইখালের আয়তন ১৬ দশমিক শূন্য ৬১ বিঘা। এর মধ্যে জলাধারের পুকুর হবে প্রায় ১৪ বিঘা। জলাধারটি ১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন করা হচ্ছে। গত এপ্রিলে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা। জলাধারকে কেন্দ্র করে ১ হাজার ৯৬৮ ফুটের হাঁটাপথ, ২ হাজার ১৫৫ ফুটের বাইসাইকেল লেন এবং ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গা সবুজায়ন করা হবে। থাকবে দুটি এম্ফিথিয়েটার। মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও চারু এন্টারপ্রাইজ জে ভি নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর কাজ করছে। গতকাল বুধবার ধোলাইখাল জলাধার সবুজায়ন ও নান্দনিক পরিবেশ উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে এই নোংরা ও ভাগাড়ের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে হাতিরঝিলের চেয়ে সুন্দর, সবুজ ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খালের মালিকানা বুঝে পায় সিটি করপোরেশন। এর পরপরই খাল দখল, উদ্ধার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করে সংস্থাটি। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের এই খাল কাগজপত্রে ১০০ ফুটের বেশি প্রশস্ত হলেও বাস্তবে টিকে আছে ২৫-৩০ ফুট।

গত শতকের আশির দশকে রায় সাহেব বাজার মসজিদের পাশে ছিল নৌকার ঘাট। নব্বই সালেও মানুষ নৌকা দিয়ে ঘাটে আসত। যতীন্দ্রমোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’ বইয়ে এই খালের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, ‘এই খাল বালু নদী হইতে বহির্গত হইয়া ঢাকা ফরিদাবাদের নিকটে বুড়িগঙ্গার সহিত মিলিত হইয়াছে। এই খালের একটি শাখা ঢাকা শহরের মধ্য দিয়া বাবুবাজারের নিকটে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রবেশ লাভ করিয়াছে।’

ধোলাইখালের দুটি অংশ। একটি অংশ বুড়িগঙ্গা থেকে সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, ওয়ারী হয়ে দয়াগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৫.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বিতীয় অংশ দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে ধোলাইখালের আগের অংশের সঙ্গে মিশেছে—এই অংশ ১.৯৭ কিলোমিটার। লোহার পুল থেকে অর্থাৎ জহির রায়হান অডিটোরিয়াম থেকে শুরু করে কেশব ব্যানার্জি রোড-সংলগ্ন এবং মিল ব্যারাকের পাশ ঘেঁষে খালের যে উন্মুক্ত অংশ আছে, সেটুকুও আবর্জনায় ভরাট; আর দুই পাশের ভরাট জায়গাও দখল হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। খালের সামান্য যে পানি, তা-ও নোংরা, দূষণে দুর্গন্ধময়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ধোলাইখাল সেটা তো এখন নামে আছে, বাস্তবে নেই। এক সময় এখানে বিল ছিল, নৌকাবাইচ হতো। কিন্তু সেই খাল বা বিল আর নেই। প্রথমে ছোট ছোট টং বসিয়ে ব্যবসা করেছিল অনেকে। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে বড় বড় অট্টালিকা। এসব অবৈধভাবে বিভিন্ন সময় দখল করে নিয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com