
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলার আসামি হিসেবে দুই মাস কারাভোগ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমাতুল্লাহ বুশরা। এরপর বুশরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অপ্রত্যাশিতভাবে কারাগারে যাওয়া ও কারাভোগের দুঃস্মৃতি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। সেইসঙ্গে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে নিজেকে প্রস্তুত করছেন।
এ হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সেখানে একমাত্র এজাহারভুক্ত আসামি বুশরাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেন। তথ্যগত ভুলের কারণে বুশরাকে আসামি করা হয়। তবে মামলার বাদী নূরউদ্দিন রানার দাবি, বুশরা অব্যাহতি পেতে পারে না।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার কালবেলাকে বলেন, ‘ফারদিন হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে আদালতে দাখিল করব।’
বুশরার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুশরা মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েছেন। পড়ালেখাসহ তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তিনি এখন শারীরিকভাবেও অনেক দুর্বল। খাওয়া-দাওয়া ঠিকভাবে করেন না। খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। কারোর সঙ্গে কথাও খুব একটা বলেন না।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে বুশরা সবার থেকে ছোট ছিলেন। সেখানে তিনি বিষণ্ন থাকতেন, অনেক কান্নাকাটি করতেন। এজন্য কারাগারের জেলার এসে তার খোঁজ নিতেন। তিনি বুশরাকে কারাগারে ভালো রাখার চেষ্টা করতেন। কারাগারে বুশরাকে ক্যান্টিনের হিসাব-নিকাশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাতে তিনি ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে পারেন।
বুশরার চাচা মাজহারুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বুশরা পরবর্তী সেমিস্টার পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। তার জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা যথাসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে, মামলার বাদী পরশের বাবা নূরউদ্দিন রানা কালবেলাকে বলেন, বুশরা অব্যাহতি পেতে পারে না। সে ইন্ধন দিয়ে ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। সে হত্যার সঙ্গে জড়িত। ডিবির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালত নারাজি দেব।
গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা থেকে ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় আমাতুল্লাহ বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় মামলা করেন নিহত ফারদিনের বাবা নূরউদ্দিন রানা। মামলার পর গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরার একটি বাসা থেকে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ১৬ নভেম্বর আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর গত ৫ জানুয়ারি বুশরার পক্ষে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। এ সময় মামলার বাদী ফারদিনের বাবা নূরউদ্দিন রানা উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী শামীম হাসান জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে গত ৮ জানুয়ারি ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর গত ১০ জানুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।