বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
জুনায়েদ শিশির
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদের আগে ১৪৫ কারখানায় বেতন-ভাতার অনিশ্চয়তা

ঈদের আগে ১৪৫ কারখানায় বেতন-ভাতার অনিশ্চয়তা

ঈদ ঘনিয়ে এলেও তৈরি পোশাক খাতের ১৪৫টি কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এর ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর ও ময়মনসিংহে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৮ শ্রমিকের মধ্যে অসন্তোষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নির্ভরযোগ্য সূত্রে ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এর সমাধানে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে দরকষাকষি চলছে বলে তৈরি পোশাক খাতের প্রধান দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা কালবেলাকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, কারখানা ব্যবস্থাপনায় কিছু অসাধু ব্যক্তি থাকায় শ্রমিক হয়রানি হচ্ছে। নতুন পুরোনো ইস্যু তৈরি করে বৈষম্য তৈরি করছে। আবার অনেক কারখানায় অহেতুক কারণে বেতন কাটা হচ্ছে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা না থাকলেও ছোট ছোট কারণে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।

রাষ্টীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের ১৪৫টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের বাণিজ্য সংগঠন বিজিএমইএ ও বেকেএমইএসহ অন্যান্য অংশীজনকে নিয়ে দফায় দফায় সভা করেছেন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এসব সভায় ঈদের আগেই শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে, সেসব কারখানায় কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে বিজিএমইএ বা সংশ্লিষ্ট সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক কারখানায় ব্যবস্থাপনায় নতুন ও পুরোনো শ্রমিক নিয়ে বৈষম্যের তৈরি করে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। কারখানা মালিক পুরোনো শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিচ্ছেন, কিন্তু নতুন শ্রমিকদের বোনাস দিচ্ছেন না। যা শ্রমিক অসন্তোষের বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে।

জানা গেছে, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের মুনলাক্স অ্যাপারেলস লিমিটেডে প্রায় ৫শ শ্রমিক কাজ করছেন। বেতন না পাওয়া কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহিউদ্দিন উদ্দিন বিশ্বাস কালবেলাকে জানান, সমস্যা আছে, সমাধানের চেষ্টা চলছে। ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক টাকা না দিলে শ্রমিকের বকেয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মূল কথা হচ্ছে, শ্রমিক পাওনা আছে, তাদের পাওনা দিতে হবে। টাকা পেলে দিয়ে দেব। কালকে (আজ) পেলে আজকেই দিয়ে দিব। যারা গ্রামে চলে গেছে, তাদেরকে বিকাশে হলেও দিয়ে দিব।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা অন্তিম নিট কম্পোজিট লিমিটেডের অন্তত ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। তাদের বেতন-বোনাস নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দাবি আদায়ে কারখানাটিতে প্রায় শ্রমিক আন্দোলন হয়। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে কারখানার অ্যাডমিন অফিসার মাহবুব কালবেলাকে বলেন, কারখানায় কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই। আগামী (আজ) কালের মধ্যে সব শ্রমিক তাদের বকেয়া বেতন পেয়ে যাবে। কোন শ্রমিক আন্দোন করেনি।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতা ফজলে শামীম এহসান জানিয়েছেন, মূলত সেসব কারখানায় অসন্তোষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাদের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্ডার কমে যাওয়া এবং ক্রেতা পণ্যের মূল্য পরিশোধে বিলম্ব করা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সমস্যা ও জ্বালানি সমস্যার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। এর পরও সরকার ও মালিক পক্ষ আন্তরিকভাবে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের জন্য কাজ করছে। যেখানে ব্যাংকের প্রয়োজন সেখানে তা করা হচ্ছে। আবার শ্রমিকের অযৌক্তিক দাবিও চিহ্নিত করা হচ্ছে। এক কথায় বেতন-ভাতা ছাড়া কোনো শ্রমিক বাড়ি যাবে না। সেখানে সমস্যা সেখানে সমাধানের জন্য দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে বলেন, আমাদের কারখানা নিয়ে যে সংকট বা সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, এমন কোনো অভিযোগ বিকেএমইএর কাছে নেই। কেউ এখন পর্যন্ত দেয়নি। যেখানে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল আমরা চেষ্টা করেছি সমাধান করতে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। দু-একটি কারখানায় অসুবিধা আছে, দু-এক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

অপরদিকে বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সারাদেশের বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৯৮ ভাগ কারখানা শ্রমিক তাদের মার্চ মাসের বেতন পেয়ে গেছেন। এ ছাড়া ঈদের বোনাস পেয়েছেন ৮৯ ভাগ। বিজিএমইএর কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি কোনো তথ্য থেকে থাকে তা রোজার প্রথম দিকের হতে পারে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি। যদি কোনো কারখানায় সমস্যা থাকেও ঈদের আগেই সমাধান হয়ে যাবে— ইনশাআল্লাহ।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, অধিকাংশ কারখানায় বেতন-বোনাস হয়েছে। বাকিগুলোর হয়ে যাবে। একটি প্রতিবেদন হয়েছে, সেখানে কিছু কারখানায় সমস্যার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা শ্রমিক, মালিক, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং সরকার পক্ষ একসঙ্গে কাজ করছি। যারা শ্রমিকের পাওনা দিতে চাচ্ছে না তাদের প্রতি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, বেতন-ভাতা বাদে কোনো শ্রমিক ঈদ করবে না। মূলত যেসব কারখানায় সমস্যা হচ্ছে, সেখানে কারখানা ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের আচরণের কারণেই শ্রমিক অসন্তোষের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তারা শ্রমিকের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে। শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে দিচ্ছে। শ্রমিক অসন্তোষ কমাতে এদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার চিপকেও ব্যর্থ মোস্তাফিজ

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন ডা. আতিকুর

চাঁদপুরে টাউন হল মার্কেটে আগুন

টি-২০ খেলতে সিলেটে ভারত নারী ক্রিকেট দল

সুদের ওপর কর অব্যাহতি পেল অফশোর ব্যাংকিং

এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় বাচসাস’র নিন্দা

চবিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রী থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

সেতুমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়ায় শাহবাগ থানায় জিডি

পদ্মা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

১০

আদাবরে স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

১১

ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক

১২

অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি, বিপাকে পুলিশ কনস্টেবল

১৩

গরমে বেড়েছে ডায়রিয়া, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৮৩

১৪

একাধিক অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল, কে এই তরুণী

১৫

‘পরকীয়ার জেরে’ হত্যা করা হয় মিতুকে : মা

১৬

গাজার সেই শহরে আবারও নারকীয় হামলার ঘোষণা

১৭

রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদে 

১৮

যেসব জেলায় শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা

১৯

‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার’

২০
*/ ?>
X