কখনো আকস্মিক আবার কখনো মৌসুমি বন্যায় প্রতিবছর তিস্তার ভাঙনে ভিটেমাটি ছাড়ে শত শত পরিবার। ফসলি জমিতে মাইলের পর মাইল বালুর স্তূপ পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ; কিন্তু বন্যার পরপরই বদলে যায় তিস্তাপাড়ের চিত্র। নদীর চরে কৃষকরা ফলাচ্ছেন ২৮ প্রকারের ফসল। এ যেন বানভাসিদের ভাগ্যবদলের যুদ্ধ।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিস জানায়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় ১ হাজার ৩৭৬টি চর রয়েছে। সেখানে গম, ভুট্টা, চীনাবাদাম, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, মটরশুঁটি, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, ধনিয়া. কালিজিরা, সূর্যমুখী, সরিষা, কলা, আলু, মিষ্টি আলু, তিল, মেথি মসুর ডালসহ ২৮ প্রকার ফসলের চাষ হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, চরগুলোতে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করেন কৃষকরা। চরে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮১৯ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর উৎপাদন হয় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার ফসল।
রংপুরের গঙ্গাচরার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক সময় কী আছিল নে আমার। তিস্তা নদী বাড়ি-ঘর জমি সোউগ নিয়ে গেইচে। এ্যালা বালু চরোত কপাল ঘোরাইতেছি। এটে আবাদ করতে কম টাকা নাগে, সেজন্যে কিছুটা লাভ হয়।’
আরেক বানভাসি মনসুর আলী বলেন, ‘চরোত সব আবাদ হয়। খাটনি (কষ্ট) একনা বেশি। যেভাবে বন্যাত ক্ষতি হয়, চরোত এই আবাদ না হইলে ঢাকাত যায়া হয় ভিক্ষা না হয় রিকশা চলে খাওয়া নাগিল হয়।’
অন্যদিকে বিনবিনার চরে আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘চরোত যদি আবাদ না হইল হয়, তাইলে কী করি খাইনো হয়, তা আল্লায় জানে। থাকি নদীর বান্দের ওপর।’ তাদের মতো আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিস্তার বিস্তীর্ণ বালু চরে আবাদ হওয়ায় দারুণ খুশি তারা।
কৃষকরা জানায়, বন্যার পর চরের মাটিতে পলি জমায় সার লাগে না। তবে ফসল ঘরে তোলা আর বিক্রি নিয়ে আছে অভিযোগও। আব্দুর রহমান বলেন, সবসময় ক্ষতির মুখে থাকি। বিপুল পরিমাণের এই ফসল ঘোড়া কিংবা মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে হাটবাজারে বিক্রি করতে হয়। সরকার যদি পাইকারের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে এখানকার কৃষকরা লাভবান হতো।
কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, কৃষি বিভাগের উচিত চর এবং চরের আবাদ নিয়ে পরিকল্পনা করা, যাতে ফসলগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো যায়। যদিও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, এরই মধ্যে চরাঞ্চলের কৃষকদের সহযোগিতায় কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে উৎপাদন দ্বিগুণ বাড়বে। বলেন, টেকসই আবাদের জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী করছি। যে সময় যে আবাদ প্রয়োজন, তা করতে কৃষকদের সবসময় সহযোগিতা করছি।