
রাজধানীর উত্তরায় মানি প্লান্ট লিঙ্ক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের গাড়ি থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা লুট হওয়ার দিনই ডিবি জানিয়েছিল ৯ কোটি টাক উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু থানায় নিয়ে সেই টাকা গুনে দেখা যায়, অঙ্কটা মাত্র ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার। তবে ৯ কোটি উদ্ধারের খবরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সিকিউরিটি কোম্পানির কাছ থেকে সেই টাকা চাইছে। ডিবির বক্তব্য আর উদ্ধারের অঙ্ক না মেলায় প্রতিষ্ঠানটি বীমা দাবিও করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে টাকা বহনের দায়িত্বে থাকা ওই সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠান।
এদিকে ডিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, ধারনার ওপর সেদিন উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্কটা বলা হয়েছিল। তবে সবার উপস্থিতিতে গুনে যা পাওয়া গেছে, সেটাই আসল। লুণ্ঠিত বাকি টাকাও উদ্ধার ও জড়িত ডাকাতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অবশ্য সূত্র বলছে, একাধিক ডাকাত গোয়েন্দা জালে রয়েছে। তাদের যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। ওই সূত্রটি জানায়, ডাকাতিতে ব্যবহৃত কালো রঙের মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। খিলক্ষেত এলাকায় ডাকাত চক্র ওই গাড়ির ভেতরই তিনটি ট্রাঙ্ক ফেলে যায়। ওই ঘটনায় তুরাগ থানায় দায়ের মামলার তদন্ত দায়িত্ব নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা নিয়ে ঢাকা থেকে সাভারের দিকে যাচ্ছিল মানি প্লান্ট লিঙ্ক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের একটি মাইক্রোবাস। এতে নিরাপত্তাকর্মীসহ পাঁচজন ছিলেন। গাড়িটি উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় ১১ নম্বর ব্রিজের ঢালে যেতেই হঠাৎ করে কালো রঙের অন্য একটি মাইক্রোবাস দিয়ে মানি প্লান্টের টাকা ভরা গাড়ি থামানো হয়। এরপর ১০ থেকে ১২ জন কালো মাইক্রোবাস থেকে নেমে নিরাপত্তাকর্মীদের টানাহেঁচড়া শুরু করে, চড়-থাপ্পড় দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই টাকাভর্তি চারটি ট্রাঙ্ক লুট করে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। মানি প্লান্ট লিঙ্ক সিকিউরিটিজ কোম্পানি ব্যাংকটির বিভিন্ন বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, লুট হওয়া টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর তুরাগ থানা পুলিশ বলছে, ডিবির হাতে উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার।
ডিবির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, তারা ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছেন। যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এরপর টাকা উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
অন্য এক কর্মকর্তা জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে টাকা লুটে জড়িত কয়েক ডাকাতের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। ওই দুটি এলাকায় ডিবি অভিযানে রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের অভিযানের মুখে ডাকাত দল কালো মাইক্রোবাসটি খিলক্ষেতের ৩০০ ফুট সড়কের নির্জন এলাকায় ফেলে যায়। সেখান থেকে ডিবির মিরপুর বিভাগ তিনটি ট্রাঙ্ক জব্দ করে। এরপর থানা পুলিশের উপস্থিতি এবং মানি প্লান্টের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে টাকাগুলো গোনা হয়।
ওই ঘটনায় দায়ের মামলার বাদী ও মানি প্লান্টের পরিচালক (অপারেশন) আলমগীর হোসেন কালবেলাকে বলেন, পুলিশ বলেছে ডাকাতিতে ব্যবহৃত কালো মাইক্রোবাসটি জব্দ করার পর তিনটি ট্রাঙ্ক পাওয়া যায়। এরপর তাদের সামনে রেখেই ট্রাঙ্ক তিনটি খোলা হয়। এর মধ্যে একটি ট্রাঙ্কে টাকা পাওয়া যায়নি, সেটার নিচ দিয়ে ভাঙা ছিল। অন্য একটি ট্রাঙ্কও ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তালা ভাঙার চেষ্টা চললেও তা পারেনি।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর এসেছে ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করা টাকা দাবি করছে। তারা টাকা ফেরত পায়নি আইনি জটিলতায়। টাকা তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার পর বুঝতে পারবেন কত টাকা উদ্ধার হয়েছে। তা ছাড়া ৯ কোটি উদ্ধারের কথা যেহেতু পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, পেপার-পত্রিকায়ও এসেছে, এখন ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানও বীমা দাবির বিষয়ে ঝামেলা করবে। তবে আজ রোববার অফিস চালুর পর ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা আনুষ্ঠানিক কথা বলবেন।