আছাদুল ইসলাম, জয়পুরহাট
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মিলিয়ে যায়নি হাওয়াই মিঠাই

মিলিয়ে যায়নি হাওয়াই মিঠাই

শীতলপাটি, নকশিকাঁথা কিংবা তালপাতার পাখার মতোই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হাওয়াই মিঠাই। একটা সময় ছিল, যখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করত ফেরিওয়ালারা। অলস দুপুরে দূর থেকে কানে আসত, হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতার হাতের ছোট্ট ঘণ্টার আওয়াজ। তা শুনেই চঞ্চলতা বেড়ে যেত বাড়ির শিশুদের। এক দৌড়ে দল বেঁধে চলে যেত বিক্রেতার কাছে। তিনদিকে কাঁচ লাগানো টিনের বাক্সে থাকত রং-বেরঙের হাওয়াই মিঠাই। কখনো অল্প কিছু পয়সার বিনিময়ে আবার কখনো বাড়ির অব্যবহৃত জিনিসের বিনিময়ে মিলত এ মিঠাই।

সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে এই হাওয়াই মিঠাই। আগে ফেরি করে বিক্রি করা হলেও এখন এর দেখা মেলে বিভিন্ন বিশেষ দিন কিংবা গ্রামীণ মেলায়। তবে শিশু-কিশোরদের কাছে এ মিঠাইয়ের কদর এখনো কমেনি।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানের বাইরে দেখা মিলল বৃদ্ধ আবুল কাশেমের। প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছিলেন। কথা বলে জানা গেল, এ ব্যবসার সঙ্গে এক সময় জড়িত ছিল তার মতো অনেকেই। এখন বেশি লাভের আশায় অন্য ব্যবসায় জড়িয়েছেন তারা। তবে দীর্ঘদিনের এ ব্যবসা আঁকড়ে ধরে আছেন আবুল কাশেম।

ছোট বয়স থেকেই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন আবুল কাশেম। বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। থাকেন পার্বতীপুরে। দুই ছেলের মধ্যে একজন তার মতো হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন। আরেকজন ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করেন।

স্থানীয় বাজারের একটি ছোট কারখানায় তৈরি হাওয়াই মিঠাই পাইকারি হিসেবে কেনেন আবুল কাশেম। পরে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন নানা শহর আর গ্রামে। আর জাতীয় দিবসে ছুটে যান গ্রামীণ কোনো মেলায়। এতে বিক্রিবাট্টাও হয় বেশি। অল্প পুঁজিতে দিনে যা আয় হয়, তাতেই চলে সংসার। তিনি জানালেন, হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয় না, এমন নয়। তবে মুখে পুরে নিমেষেই শেষ হয় বলে অনেকেই পাঁচ টাকা দিয়ে কিনতে চান না। চিনির দাম বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে এ মিঠাইয়েরও।

জয়পুরহাট শহরের জানিয়ার বাগান এলাকার কিশোর তাওহীদ বলে, হাওয়াই মিঠাই খেতে খুব মজা, কিন্তু মুখে দিতেই নেই। তখন আবারও খেতে ইচ্ছে হয়। আর ক্ষেতলাল উপজেলার দেওগ্রামের অছিম উদ্দীন বললেন, তাদের গ্রামের লাঠি খেলার মেলায় প্রতিবছর হাওয়াই মিঠাই এক সময় বিক্রি হতো। তবে ২০-২৫ বছর আগে যেভাবে গ্রামে গ্রামে বিক্রি হতো, এখন আর তা দেখা যায় না। এখনকার অনেক ছেলেমেয়ে হয়তো হাওয়াই মিঠাই খায়ও নি।

আবুল কাশেম এখনো সেই টিনের বাক্স ব্যবহার করেন। তিনদিক কাচ লাগানো এ বাক্সের ভেতরে থরে থরে সাজানো লাল-গোলাপি হাওয়াই মিঠাই। আর এক হাতে থাকে একটা ছোট্ট ঘণ্টা। যেন ঐতিহ্য মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার প্রধান ক্রেতা শিশু-কিশোররা হলেও বড়রাও নেন মাঝেমধ্যে। মেলা আর বিশেষ দিনগুলোতে তাকে দেখেই বাবা-মায়ের কাছে আবদার করে শিশুরা। সেই সুযোগে নিজেদের ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করেন তারাও। সন্তানের সঙ্গে ফিরে যান পুরোনো দিনে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়ক দুর্ঘটনায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ

‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার’

আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ১৩০ ব্রিটিশ এমপির চিঠি

ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তার পদত্যাগ

এবার ড. ইউনূসের ইউনেস্কোর পুরস্কার নিয়ে মুখ খুললেন তার আইনজীবী

দাম কমেছে অর্ধেক, তবুও মিলছে না ক্রেতা

একটা জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে : ফখরুল

জেল থেকে মুক্ত হয়ে আলভেজের পার্টি

১০

ব্যাংকের ভেতর থেকেই গ্রাহকের টাকা ছিনতাই

১১

একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন 

১২

সুলতান আহমেদ হাওলাদারের মৃত্যুতে জাপা চেয়ারম্যানের শোক

১৩

সাতক্ষীরায় নদীর বেড়িবাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ

১৪

ভয়ংকর ত্রয়ীতে নতুন স্বপ্ন ব্রাজিলের

১৫

বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্য / কোনো গ্রুপ নয়, সবাইকে নিয়ে কাজ করব

১৬

রাজনীতিতে আসছেন সানিয়া মির্জা!

১৭

শেষ হচ্ছে না ‘পুষ্পা’র গল্প, আসবে তৃতীয় কিস্তি

১৮

নোয়াখালীর সেই পুকুরে মিলল আরও ১০০ ইলিশ

১৯

আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

২০
*/ ?>
X