আত্মসমর্পণ করা ৩১৫ চরমপন্থি সদস্যের বিরুদ্ধে সব মামলা পর্যালোচনা করে সেই অনুযায়ী তাদের পুনর্বাসন করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের কমিটমেন্ট।’ গতকাল রোববার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় র্যাব-১২ সদর দপ্তরে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আশ্বাস দেন।
এর আগে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘সন্ত্রাসের জীবন ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি’ স্লোগানে চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তখন যেমন সবাইকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তেমনি আজও আমাকে আসার আগে বলেছেন, যারা আলোর পথে ফিরে আসবেন, তাদের আর্থিক থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
র্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, র্যাব-১২ অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, আত্মসমর্পণকারী দলের সদস্য ও তাদের স্বজনরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, তানভীর শাকিল জয় এমপি, ডা. আব্দুল আজিজ এমপি, মেরিনা জাহান কবিতা এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২০ সালে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদকে চরমপন্থিদের আগ্রাসন থেকে রক্ষায় তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা বেশ কয়েকটি চরমপন্থি সংগঠনের সক্রিয় ৩ শতাধিক সদস্য আলোর পথের যাত্রী হতে আত্মসমর্পণের সম্মতি জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল প্রায় ২১৬টি অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইল জেলার ৩১৫ চরমপন্থি সদস্য।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে পূর্ববাংলা সর্বহারা দলের কেন্দ্রীয় এক সদস্য বলেন, আমরা যে জগতে বাস করেছি, এটা কোনো জগৎ নয়। এটা ছিল অন্ধকার জগৎ। আমাদের স্বজন মারা গেলেও তাদের কবরে মাটি দিতে পারিনি। এ জগৎ থেকে সরে আসতে আজ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ আত্মসমর্পণ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি আজ তাদের ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
রুজভেল্ট নামে এক চরমপন্থি নেতা বলেন, আমরা সুস্থ জীবনে ফিরে আসছি। সরকার যেন মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। সমাজ আমাদের ওইভাবে গ্রহণ করবে না। সরকার যেন আমাদের সংসার চালানোর মতো কর্মসংস্থান করে দেয়।
এসব চরমপন্থির মামলা পর্যালোচনার বিষয়ে র্যাব-১২ অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন বলেন, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ ছাড়া ছোটখাটো অপরাধ সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসবে এবং আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে।
অনুষ্ঠানে র্যাবের কাজের প্রশংসা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র্যাব ভালো কাজের পাশাপাশি মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। এজন্যই ‘চরমপন্থিরা’ আত্মসমর্পণের জন্য র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
যেসব চরমপন্থি এখনো আত্মসমর্পণ করেননি কিংবা করবেন না, তাদের হুঁশিয়ার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘যদি কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তাদের বিরুদ্ধে কঠিনতর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি মনে করেন, আমরা দুর্গম এলাকায় বসে থাকব, অপরাধ করব আর আপনারা ধরতে পারবেন না, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’