
আগামী ১ জুলাই থেকে যে নতুন অর্থবছর শুরু হচ্ছে, সেখানে বিদ্যুৎ খাতে নিট ভর্তুকি বরাদ্দ থাকছে না। কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত বাস্তবায়নে সরকার এখন বিদ্যুৎ খাত থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পদক্ষেপে রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে তিন দফায় গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার কাছ থেকে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি সমন্বয় করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ২০ শতাংশ দাম সমন্বয় করা গেলে তারা ব্রেক ইভেন্টে (না লাভ-না লোকসান) থাকবে। এ লক্ষ্যে আগামী জুনের পর ফের ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুতের উপকরণ আমদানি মূল্যে যে স্থিতিশীলতা রয়েছে, সেটি সামনে খুব বেশি হেরফের হবে না। ফলে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর বিদ্যুতে বাড়তি ভর্তুকির দরকার পড়বে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকি বরাদ্দ রাখতে যাচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে ভর্তুকি সমন্বয়ের পর হিসাব কমবেশি হতে পারে। এরপরও যদি আমদানিজনিত উপকরণের বাড়তি মূল্যের কারণে নতুন করে কোনো ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে, সেটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় করা হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের তহবিলে ঘাটতি তৈরি হলে তা চলতি অর্থবছরের মতো বকেয়া হিসেবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর পরিশোধ করা হবে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের বাড়তি দাবির মুখে সংশোধিত বাজেটে সেটি ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। যদিও মোট ভর্তুকি ৪৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দাবি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ হিসাবে মাসওয়ারি গড় ভর্তুকি দাবি হয় ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের মাত্র এক মাস বা জুলাইয়ের ভর্তুকি পরিশোধ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। যেখানে জুলাইতে দাবির ৪ হাজার ১২৫ কোটির স্থলে পরিশোধ হয়েছে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। বাকি রয়েছে আরও ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ভর্তুকি পরিশোধে পিছিয়ে ১১ মাস। নভেম্বর থেকে ভর্তুকি সমন্বয় শুরু হওয়ায় তা সাশ্রয় শুরু হবে ডিসেম্বর হিসাবে। ফলে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর-নভেম্বর এই চার মাস এবং জুলাইয়ের
অবশিষ্ট ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকাসহ সমন্বয় ছাড়া মোট ভর্তুকি পরিশোধ করতে হবে ১৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর থেকে সমন্বয় শুরু হওয়ায় বাকি ২৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার দাবিতে ৭ মাসে ভর্তুকি সমন্বয় হবে মোট ৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
ভর্তুকি দাবির বাকি ৩১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে তিন দফায় ১৫ শতাংশ ভর্তুকি বা ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা সমন্বয় করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে প্রকৃত ভর্তুকি যাবে ২৬ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সমন্বয় ছাড়া মোট ভর্তুকি দাবি ১৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকাসহ সমন্বয়ের পর দাবি মিলে চলতি অর্থবছরের পুরো সময় বিদ্যুৎ বিভাগ বকেয়া হিসেবে পাবে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।