জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিনে ৩ প্রতিষ্ঠান

কালবেলা।
কালবেলা।

জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিনের ভয়ংকর বাণিজ্যের সঙ্গে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টার ও আল নূর ফাউন্ডেশনের কর্মীদেরও সম্পৃক্ততা মিলেছে। ডিবি রাজধানীর মিরপুরে এ আর খান হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারে অভিযানও চালায়। তবে ওই ব্যক্তি আগেই অন্তত দুই বস্তা নকল ভ্যাকসিন নিয়ে পালিয়ে যায়।

ডিবি সূত্র বলছে, এই ব্যবস্থাপক ছাড়াও নকল ভ্যাকসিন বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠানটির মালিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এ আর খানের ভাই আবু জাফরের সম্পৃক্ততা মিলেছে। অন্য দুই প্রতিষ্ঠানেরও একাধিক কর্মীর বিরুদ্ধে নজরদারি শুরু হয়েছে।

এদিকে নকল ভ্যাকসিন তৈরি কারখানার মালিক হিমেল সিদ্দিককে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল দৈনিক কালবেলায় ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিমেল নকল ভ্যাকসিনের হোতা’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। হিমেল ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী এই সংগঠনের নেতা হলেও তার বাবা কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মীর মোহাম্মদ।

গত বুধবার ডিবি জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিনসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। ডিবি কর্মকর্তারা জানান, ভারত থেকে অবৈধপথে হেপাটাইটিস-বি’র আমদানি নিষিদ্ধ ভ্যাকসিন ‘জেনেভ্যাক-বি’ এনে তা দিয়ে জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিন বানিয়ে আসছিল চক্রটি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা ও ছাত্রীসহ অন্তত ছয় হাজার নারীকে এই নকল ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। তাদের অনেকেই এখন অসুস্থ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি গোলাম সবুর কালবেলাকে বলেন, নকল ভ্যাকসিন চক্রের হোতা হিমেলসহ সম্পৃক্ত অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আগে গ্রেপ্তার পাঁচ সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে নকল ভ্যাকসিনকাণ্ডে অন্তত তিনটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র জানায়, ডা. এ আর খানের ভাই আবু জাফর ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে এই চক্রের ঘনিষ্ঠতার তথ্য মিলেছে। এর পরই এ আর খান হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক কর্মীর যোগসাজশও পাওয়া গেছে।

অবশ্য এ আর খান হাসপাতালের কর্ণধার চিকিৎসক এ আর খান দাবি করেন, নকল ভ্যাকসিনের সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ব্যবস্থাপক সাইফুল আলাদাভাবে ওষুধের ব্যবসা করেন। অপরাধীরা হয়তো তার প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে আসছিল। তা ছাড়া বলেন, করোনার শুরু থেকে তার হাসপাতালটি বন্ধ। সেটি নিরাপত্তাকর্মীরা দেখভাল করেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে নকল ভ্যাকসিন তৈরি ও প্রয়োগের তথ্য পাওয়ার পর তিনি দারুস সালাম থানায় জিডি করেছেন।

অবশ্য ডিবির তদন্তকারীরা বলছেন, অন্তত দুই বছর ধরে এ আর খান ফাউন্ডেশনের নামে ভ্যাকসিনের প্রচারণা চালানো হয়েছে, ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, যা নকল ভ্যাকসিন। এটা নাম ভাঙিয়ে করা হয়ে থাকলে তো প্রতিষ্ঠানটি আগেই পুলিশকে অবহিত করত।

হিমেলের বহিষ্কারের বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিরাজুর রহমান সুমন দাবি করেন, হিমেলের বিরুদ্ধে একের পর অভিযোগ আসছিল। এ কারণে গত ৮ মার্চ তাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের চিঠি তৈরি করে রেখে দেওয়া হয়েছিল। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার চিন্তায় এতদিন তা গোপন রাখা হয়।

তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সূত্র বলছে, গতকাল কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে হিমেলের নাম আসার পর সংগঠনটির নেতারা নড়েচড়ে বসেন। এরপর দায় এড়াতে তাকে পুরোনো তারিখ দিয়ে তড়িঘড়ি করে বহিষ্কার করেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com