
নিত্যপণ্যের বাজারে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে এখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল বুধবার ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা কেজি দরে তারা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা কমবে।
হিলি, সোনামসজিদ, বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনেকে ঋণপত্র খুলেছেন, আবার অনেকে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশের বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারবেন। তখন পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দাম এখন যেভাবে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ বাড়ানো হবে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের বাজারে ব্যবসায়ীদের কারসাজি সব সময় থাকে। এখন দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হলেও তারা সংকট দেখাচ্ছে। আবার সংরক্ষণের অভাবে ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ঘাটতি দেখা দেয়। সে অজুহাতে বাজারে অযৌক্তিক পর্যায়ে দাম চলে যাচ্ছে। সেজন্য এখন আমদানি করা যেতে পারে।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানি খোলার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
জানা গেছে, সারা বছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন হলেও প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টন আমদানি করতে হয়। তবে প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষতিসহ পেঁয়াজের উৎপাদন প্রায় ৩৬ থেকে
৩৭ লাখ টন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পচে যায় বা নষ্ট হয়। আবার আমদানিকৃত পেঁয়াজেও প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষতি বা নষ্ট হয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ হারে সিডি (শুল্ক কর) আরোপিত আছে।
রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, আমদানি পেঁয়াজের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। যদিও বাজারে আমদানি পেঁয়াজ নেই বলে জানিয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তবে দামের সত্যতা রয়েছে ঢাকার নিত্যপণ্যের বাজারে।
সেগুনবাগিচা এলাকার মুদির দোকানি মাসুদ মজুমদার জানান, গতকাল তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৭৫ টাকায়। আমদানি পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমতে শুরু করবে।
এদিকে পেঁয়াজের দামের বিষয়কে ভোক্তারা অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক মনে করছেন। আবদুল কাদের নামে শান্তিনগর বাজারের এক ক্রেতা বলেন, সরকার বলছে দেশে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাহলে তো দাম কমার কথা, কিন্তু গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।
শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সভাপতি হাজি মো. সাঈদ বলেন, আমদানি না হলে বাজার কমবে না। বাজারে দাম বাড়ার জন্য আমরা দায়ী না। মোকাম থেকে আড়তে পেঁয়াজ কম পাঠানো হচ্ছে। যারা পেঁয়াজ মজুত করেছে, তারা বাজারে দামের প্রভাব রাখছে।
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বাবুল হোসেন বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম অনেক কম। আমদানি শুরু হলে দেশের বাজারের অস্থিরতা কমে যাবে। সপ্তাহখানেক আগে এলসি করেছি। দু-এক দিনের মধ্যে পেঁয়াজ চলে আসবে। তবে ভারতের বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে আমদানিতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।