শাহরিয়ার হাসান
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বোবা ওয়াকিটকি নিয়ে কর্মকর্তাদের ‘অভিনয়’

বোবা ওয়াকিটকি নিয়ে কর্মকর্তাদের ‘অভিনয়’

মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পদস্থ এক কর্মকর্তা চার বছর ধরে হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে পথেঘাটে ঘুরে কাজ করছেন। মাঝেমধ্যে ওয়াকিটকি মুখে নিয়ে কথাও বলছেন। তবে দীর্ঘদিন লক্ষ করে দেখা গেছে, যন্ত্রটির এপাশ থেকে কথা বললেও ওপাশ থেকে কখনো কোনো সংকেত আসত না। কৌতূহল নিয়ে ওই কর্মকর্তাকে বারবার জিজ্ঞেস করলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসলে ওই কর্মকর্তার ওয়াকিটকিতে কোনো সংযোগ ছিল না। অবশ্য শুধু তার নয়, পুরো সংস্থার ২৯২টি ওয়াকিটকিই অচল; কিন্তু কর্মকর্তাদের হাতে হাতে থাকে ওয়াকিটকিগুলো।

তাহলে প্রশ্ন—কেন এই অভিনয়? কর্মকর্তাদের সাফ জবাব, নিরাপত্তার জন্য। মাদক নিয়ে কাজ করায় সবসময় ঝুঁকিতে থাকতে হয়। খালি হাতে অভিযানে গিয়ে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করতে হয়। আধুনিক কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই হাজার হাজার কোটি টাকার মাদক মামলা তদন্ত করতে হয়। তাই নিরাপত্তার জন্য এই অভিনয়।

ডিএনসির কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়াকিটকির জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা, রাজশাহী ও টেকনাফে তিনটি টাওয়ার করা হয়েছে। তবে কৃচ্ছ্রসাধনের অজুহাতে সেগুলো নেটওয়ার্কিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না। তবে বিষয়টি কৌশলগত কারণে গোপন করতে চায় অধিদপ্তর। কর্মকর্তারা মনে করেন, এতে তাদের প্রতি অপরাধীদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে পারে।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ কালবেলাকে বলেন, ‘তাদের ওয়াকিটকি সচলই রয়েছে। সেগুলো আরও সক্রিয় করতে কাজ চলছে।’ তিনি দাবি করেন, ওয়াকিটকি অচলের যে বিষয়টি বলা হয়েছে, সেটি ভুল। পদস্থ এই কর্মকর্তার এমন বক্তব্যে নাখোশ বাহিনীর অন্য সদস্যরা। তারা বলছেন, তিনি কেন সত্যটা লুকাচ্ছেন, তা বুঝতে পারছেন না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ সালে ওই ওয়াকিটকিগুলো দেওয়া হয়েছে। ওয়াকিটকির সেটগুলো বাহিনীর উপপরিদর্শক থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছিল। তবে সে সময় থেকেই বোবা হয়ে পড়ে রয়েছে ওই যন্ত্রটি।

ঢাকার একটি অঞ্চলে সহকারী পরিচালক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্র নেই, ফোর্স নেই, অভিযানের যাওয়ার জন্য গাড়ি নেই। এর মধ্যে যা আছে, এক ওয়াকিটকি। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের পাশাপাশি বিপদে পড়লে কাউকে অন্তত উদ্ধার করতে পারত। সেই ওয়াকিটকিও বোবা করে রেখে দিয়েছে।

কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা বন্ধ তিন বছর:

নিয়ম অনুসারে প্রতি তিন মাস পরপর অধিদপ্তরের সব মামলা, অভিযান, তদন্ত, ভালো কাজের পুরস্কার, খারাপ কাজের তিরস্কার করার জন্য কার্যক্রম পর্যালোচনা সম্মেলন বা সভা হওয়ার কথা; কিন্তু ২০২০ সাল থেকে সেটিও বন্ধ হয়ে রয়েছে এই অধিদপ্তরে। এই তিন বছরে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর মহাপরিচালক হতে পরিদর্শক পর্যায় পর্যন্ত কার্যক্রম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় মহাপরিচালক ছিলেন ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তারপর আর কখনো পর্যালোচনা সভা হয়নি। তবে প্রতি মাসে মহাপরিচালক আট বিভাগীয় প্রধান নিয়ে একটি করে সভা করেন; কিন্তু সেই সভায় জেলার কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয় না।

অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কমিটির মেয়াদ দুই বছর পেরিয়ে চার বছর চললেও নির্বাচন হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ের অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তারা বলেন, অফিসের সিদ্ধান্ত, দিকনির্দেশনা তারা কিছু জানেন না। মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদেরও কোনো বার্তা দিতে পারেন না। এভাবে মাঠের কাজের গতি কমে যাবে, সেটিই স্বাভাবিক। কারণ, তাদের কোনো জবাবদিহি নেই।

জানতে চাইলে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আবেদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, একেবারে সবার সঙ্গে না বসলেও নিয়মিতই কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা হচ্ছে। যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে তারা তাদের অধীনদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে সবার সঙ্গে নিয়মিত বসতে পারলে ভালো হতো।

গ্রীষ্মকালে পরে আছেন শীতকালের পোশাক:

প্রায় একই রং হয়ে যাওয়ায় পুলিশের সঙ্গে অনেক জল ঘোলার পর পোশাক পেয়েছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। তবে তাদের যখন পোশাক অনুমতি হয় তখন ছিল শীতকাল। সে হিসেবে প্রত্যেক সদস্যকে শীতকালে জন্য দুই সেট করে পোশাক দেওয়া হয়। তবে শীত শেষে এখন গ্রীষ্মকাল; কিন্তু সেই পোশাকই পরতে হচ্ছে সদস্যদের। এমনকি রাষ্ট্রীয় দিবসে বিধি অনুযায়ী ‘সেরিমোনিয়াল ইউনিফর্ম’ পরার কথা থাকলেও তারা সেটি না পরে নিয়মিত পোশাক পরছেন।

নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া কক্সবাজার অঞ্চলের পরিদর্শক পর্যায়ের এক সদস্য বলেন, এই এলাকায় বেশ গরম পড়ে গেছে; কিন্তু তারা কষ্ট করে পরছেন শীতকালের পোশাক।

পোশাকের বিষয়ে অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আবেদ হোসেন বলেন, প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কিছুদিন আগে পোশাক দেওয়া হয়েছে। তাই গরমকালের পোশাক দিতে একটু সময় লাগছে। তবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি যেন খুব দ্রুত তাদের পোশাক পৌঁছে দিতে পারি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আর ঢাল-তলোয়ারবিহীন ‘নিধিরাম সর্দারে’র মতো থাকতে চান না। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থেকে অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত সাত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে বিবেচিত হলে তারা অস্ত্র ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি পেলে কাজের গতি বাড়বে।

একটি জেলায় কর্মরত এক সহকারী পরিচালক বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সভায় যখনই মাদকের কথা ওঠে, তখন সবাই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকেই দোষারোপ করে; কিন্তু আমাদের অধিদপ্তরের ‍কী চলছে, বাইরের থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছেলেদের দোষে ডুবছেন মাহাথির মোহাম্মদ

হিজাব আইন না মানায় ইরানে ব্যাপক ধরপাকড়

তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি চেয়ে হাজারো মুসল্লির কান্না

মানব পাচারের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ঝিনাইদহে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন

কারিগরির ফাঁকা সনদ মিলল তোষকের নিচে, গ্রেপ্তার কম্পিউটার অপারেটর

ঝিনাইদহে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

ভোট দিলে যে শহরে মিলবে ফ্রি বিয়ার, ট্যাক্সিসহ নানা সুবিধা

কুমিল্লায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুলের সাক্ষাৎ

১০

চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ

১১

সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী 

১২

৭৩ বছরে ছাত্র ইউনিয়ন  

১৩

কৃষক খুনের ঘটনায় থামছে না ভাঙচুর ও লুটপাট

১৪

হজের জন্য অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে সৌদি আরব

১৫

ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু

১৬

‘আমি সাঈদী সাহেব বলছি, আমার একটা ভোট প্রয়োজন’

১৭

বিএনপির আরেক নেতা বহিষ্কার

১৮

ওমরাহ নিয়ে বড় সুখবর দিল সৌদি সরকার

১৯

বঙ্গোপসাগরে জাহাজ ডুবিতে ১১ নাবিক উদ্ধার, নিখোঁজ ১

২০
*/ ?>
X