কক্সবাজারে ট্রেন যাবে সেপ্টেম্বরে

কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।ছবি : কালবেলা

পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলপথে সংযুক্ত করতে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে চলছে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলসংযোগ স্থাপনের কাজ। প্রকল্পটির প্রায় ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ। কক্সবাজার রেলস্টেশনের ঝিনুকাকৃতির আইকনিক ভবনটিও নতুন রূপে তৈরি করা হচ্ছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে বিভিন্ন পয়েন্টে দিন-রাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। আগামী আগস্টের দিকে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করবে এই পথে। আর সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বৃহৎ এ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটাই জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ও চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী। আজ বুধবার সকালে বিজয় ট্রেনে লাকসাম রেললাইনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শনের কথা রয়েছে তার।

কক্সবাজার স্টেশন নির্মাণ পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে ট্রেনে আসার জন্য সারা দেশের মানুষ আগ্রহী হয়ে আছে। এজন্য দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ অতিদ্রুত শেষ হবে। সার্বিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে, আগামী আগস্টের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করতে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে এই প্রকল্পের কাজ। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন। প্রকল্পটি শেষ হলে কক্সবাজারের পর্যটকদের জন্য যাতায়াত আরও স্বস্তিদায়ক হবে। বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক। প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করতে পারবেন প্রায় এক লাখ মানুষ। চট্টগ্রাম থেকে আড়াই ঘণ্টা এবং ঢাকা থেকে সাড়ে ৭ ঘণ্টায় পর্যটকরা পৌঁছে যাবেন কক্সাবাজার।

দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, দ্রুততার সঙ্গে কাজটি এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ। প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন দৃশ্যমান হয়েছে, নয়টি স্টেশনের মধ্যে তিনটির কাজ শেষ, পাঁচটির সৌন্দর্যবর্ধন ও দুটির অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান। একযোগে কক্সবাজার শহর, আইকনিক স্টেশন নির্মাণ, রামু, চকরিয়া ও দোহাজারী এলাকায় নির্মাণকাজ চলছে। প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম অংশের ২৫ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগস্টের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর অধীনে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার ও রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিমি রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। ভবনটি হবে ছয়তলা। মূল ভবনের সামনে খোলা মাঠে তৈরি হবে ঝিনুক আকৃতির একটি ফোয়ারা। যাত্রীরা এদিক দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন, পাহাড়, নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়াও পুরো রেলপথে নির্মিত হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সেইসঙ্গে হাতি চলাচলে রেলপথে একটি ৫০ মিটার দীর্ঘ ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে কক্সাবাজার এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সাবাজার রুটে দশটি করে ট্রেন এ পথে চলবে। তা ছাড়া, মাছ, লবণ, শুঁটকিসহ নানা পণ্য পরিবহনের জন্য থাকবে বিশেষ রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com