শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩১
জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ০৯:২২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কতটুকু সুরক্ষিত ভোটাধিকার

কতটুকু সুরক্ষিত ভোটাধিকার

একতরফা নির্বাচন, দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী, সহিংসতা, বর্জন ও ফলাফলে আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে ভোটে আগ্রহ হারাচ্ছেন ভোটাররা। বিশেষ করে বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্কের পর এর প্রভাব দেখা গেছে পরবর্তী উপ ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে। এসব নির্বাচনে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে ভোটারের উপস্থিতি। যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোটবিমুখ হয়ে পড়ছে জনগণ। এমনকি ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে নির্বাচন কমিশনের নানা উদ্যোগেও ফল দিচ্ছে না।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে পঞ্চম জাতীয় ভোটার দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দিব যোগ্যজনে।’ দিবসটি উপলক্ষে আজ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে দিবসটি পালনে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে চিঠি দিয়েছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে আসতে ভোটারদের বাধা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচনী এজেন্টদের বাধা-বিপত্তিতে শাস্তি বাড়ানোর সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আমরা চাই, ভোটাররা উৎসবমুখরভাবে কেন্দ্রে আসবেন, নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন।

আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, জনগণ যদি ভোটার হওয়া এবং ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় থাকে, তারা যদি আগ্রহ না দেখায়, তাহলে গণতন্ত্রের যে সুষ্ঠু চর্চা সেটা কিন্তু নিখুঁত হয় না।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ভোটবিমুখ হতে থাকে নাগরিকরা। সরকারবিরোধীদের বর্জনের মুখে ওই বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে বিভিন্ন এলাকায় ভোট হয়ে যাওয়ার কথা উঠে আসে বিভিন্ন মাধ্যমে। নানা আশ্বাসের পর বিএনপি জোট এ নির্বাচনে অংশ নিলেও রাতের অন্ধকারে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। এর পরই ভোটারদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়।

জাতীয় সংসদ ছাড়াও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা যায়। সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের শক্তি প্রদর্শন এবং ফলাফলে প্রভাব বিস্তারের কারণে দিন দিন এই আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।

গত ১২ অক্টোবর প্রথমবার গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি দেখে খানিকটা হতাশ হয় নির্বাচন কমিশন। সব কেন্দ্র সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে ক্ষমতাসীনদের মনোনীত প্রার্থীর কেন্দ্র দখলের চিত্র স্বচক্ষে দেখতে পান সিইসিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। পরে ওই ভোট বাতিল করে সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হয়। ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনেও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়ে। সর্বশেষ বিএনপির এমপিদের ছেড়ে দেওয়া ৬ আসনের উপনির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। এ নির্বাচনে গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানায় কমিশন।

তথ্য বলছে, অনিয়মের কারণে দুইবার উপনির্বাচন হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনে যে ভোট পড়েছে তার চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম ভোট পড়েছে ৬ আসনের উপনির্বাচনে। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ওই ৬ আসনে গড় ভোট পড়ে ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর আগে ফরিদপুর-২ আসনে ভোট পড়ে ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে, মাত্র ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া বগুড়া-৪ আসনে ভোট পড়ে ২৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। বগুড়া-৬ আসনে ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চাঁপানবাবগঞ্জ-২ আসনে ভোট পড়ে ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

২০২০ সালের মার্চে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে সবচেয়ে কম ভোট পড়ার রেকর্ড রয়েছে। ওই দিন ভোট পড়ার হার ছিল ৫.২৮ শতাংশ। তারও আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমের ব্যাপক প্রচারের মধ্যে ভোটারের খরা দেখেছিল ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে। সেবার দক্ষিণ সিটিতে ২৯ শতাংশ ও উত্তরে ভোটের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

এই ভোটবিমুখতাকে গণতন্ত্রের জন্য ‘অশনিসংকেত’ বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভোটাধিকার সুরক্ষা এবং উৎসবমুখর ভোটের জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পছন্দের দল এবং শক্ত প্রার্থী না থাকলে ভোটাররাও আগ্রহ নিয়ে ভোট দিতে আসে না। সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকেও গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বড় দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না থাকলে এবং অংশ না নিলে ভোটাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে। ভোটকে উৎসবে পরিণত করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে।

নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বলেন, ভোটাররা ভোটে আগ্রহ হারালে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে নির্বাচন কমিশনেরও দায় থাকে।

এদিকে জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর নির্বাচন ভবনের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হবে। বিকেল ৪টায় নির্বাচন ভবনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটিতে তিন চৌকশ কর্মকর্তাকে জাতীয় নির্বাচনী পদক প্রদান করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শালিকে কোপাল দুলাভাই 

৯ মাসেই রির্জাভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

চাঁদপুরে ২ শ্রমিককে ইট ভাটায় আটকে রাখার অভিযোগ

অপরাধী শনাক্ত করবে সিসি ক্যামেরা

ই-সিগারেট / নতুন মোড়কে পুরনো সর্বনাশ

নন্দীগ্রামে প্রেসক্লাবের তুহিন সভাপতি, হানিফ সম্পাদক

মসজিদে নামাজের সময় এসি বিস্ফোরণ

সপ্তাহের ব্যবধানে একই এলাকায় আবারও খুন

বদরের শিক্ষায় ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে : সেলিম উদ্দিন

১০

মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেই সাপ

১১

‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন’

১২

‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কারের যে প্রমাণ দিল ইউনূস সেন্টার

১৩

মেহেদির রং শুকানোর আগে প্রাণ গেল যুবকের

১৪

আজকের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি (২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার)

১৫

পশ্চিমাদের যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ভূপাতিত করার হুমকি পুতিনের

১৬

হাজার কোটি টাকার মালিক বাবা, কিছুই জানে না ছেলে

১৭

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে নৈরাজ্য-নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে : টিআইবি

১৮

শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ

১৯

ড. হাফিজের লেখা ‘আমরা মুক্তি সেনা’ 

২০
*/ ?>
X