
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের জন্য ৬২১৩.৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১২৬.১৯৫ একর বা ৭ হাজার ৬৩৪ কাঠা জমি খুঁজে পাওয়া যায়নি। সরকারের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) সর্বশেষ হিসাব-সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স অডিট (নিরীক্ষা) রিপোর্টে এ তথ্য উঠে আসে।
রাজউকের কর্মকর্তারা বলেছেন, অধিগ্রহণ করা ১২৬.১৯৫ একর জমি কিনতে রাজউকের ১১ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। পূর্বাচল প্রকল্পের জমি প্রতি কাঠা ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী, প্রতি কাঠা আড়াই লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিলে রাজউকের কোষাগারে ১৯০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জমা হতো। আর যদি বর্তমান বাজারমূল্য ধরা হয়, তাহলে টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। অথচ বিপুল অঙ্কের জমির কোনো হদিস নেই। জমি কেন পাওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত রাজউকের কার্যক্রম নিয়ে নিরীক্ষা চালায় অডিট অধিদপ্তর। নিরীক্ষায় বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১২৬.১৯৫ একর জমি বুঝে না পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর সচিবের দপ্তরে প্রতিবেদনসহ চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির জবাব না পেয়ে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ তাগিদপত্র পাঠানো হয়। তার পরও কোনো জবাব পায়নি অধিদপ্তর। পরে নিরীক্ষা প্রতিবেদন ২০২২ সালের ২ জুন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণ যথাযথভাবে হয়নি। যে পরিমাণ জমি কম দখলে নেওয়া হয়েছে, তা দখলে নেওয়া দরকার। অধিগ্রহণ করা জমি কম দখলে নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের জন্য ৬২১৩.৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব জমির অধিগ্রহণ মূল্য পরিশোধ করা হয় ৫৪২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি একর জমির ক্রয়মূল্য ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫০১ টাকা। অথচ জমির টাকা পরিশোধ করার পরও ১২৬.১৯৫ একর জমি পায়নি রাজউক। এই পরিমাণ জমি কিনতে ১১ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৯ টাকা ব্যয় হয়েছে রাজউকের।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২০টি ক্যাটাগরিতে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্পটিতে আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রতিষ্ঠান, বন ও ইকোপার্ক, খেলার মাঠ, ওয়াটার বডিসহ মোট ২০টি ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ করা জমির পরিমাণ ৬০৮৭.৩৫৫ একর।
কী বলছেন রাজউকের কর্মকর্তারা : রাজউক এস্টেট ও ভূমি শাখার একজন সহকারী পরিচালক বলেন, ৭ হাজার ৬৩৪ কাঠা জমি পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক, শিল্পের জন্য আলাদা আলাদা বরাদ্দ (বেইজ) মূল্য নির্ধারণ করে। এর মধ্যে আবাসিক প্লটের প্রতি কাঠার বেইজমূল্য ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে আবাসিক প্লট ৩০ লাখ থেকে ৩৫ লাখ টাকা কাঠায় বেচাকেনা হচ্ছে। বাণিজ্যিক প্লটের দাম আরও বেশি। বর্তমান বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকা ধরে হিসাব করলে জমির মূল্য দাঁড়াবে ২ হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাণিজ্যিক প্লটের মূল্য ধরে হিসাব করলে জমির মূল্য আরও বাড়বে। এসব জমি থেকে ওয়াটার বডি, ওয়াকওয়ের জমি বাদ দিলেও বাকি জমির বর্তমান বাজারমূল্য দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো।
এসব জমির বিষয়ে জানতে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) শেখ শাহিনুল ইসলামের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
রাজউকের তথ্যমতে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটি ১৯৯৫ সালে হাতে নেয় রাজউক। ২০০৩ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং ১১ সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সমন্বয়ে গঠিত টিম পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের জন্য গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার এসব জমি অধিগ্রহণ করে।